অবৈধ অভিবাসন রোধে যুক্তরাজ্যের নতুন পরিকল্পনা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:৩৩ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার শুক্রবার এক ভাষণে যুক্তরাজ্যজুড়ে বাধ্যতামূলক ডিজিটাল পরিচয়পত্র চালুর পরিকল্পনার ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা।
সরকার এই স্কিম বাস্তবায়নে কারিগরি দিক নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেবে। একইসঙ্গে, যেসব নাগরিকের স্মার্টফোন বা পাসপোর্ট নেই, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে, সেটিও বিবেচনা করা হবে।
এর আগে লেবার সরকারের আমলে আইডি কার্ড চালুর উদ্যোগ কনজারভেটিভ-লিবারেল ডেমোক্র্যাট জোট আটকে দিয়েছিল। তবে স্যার কিয়ার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আজ আমরা আগের তুলনায় অনেক বেশি ডিজিটাল পরিচয় বহন করি। মানসিকভাবে বিষয়টির গুরুত্বও এখন ভিন্ন।”
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিজিটাল আইডির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে বসবাস ও কাজ করার বৈধতা যাচাই করা হবে। প্রতিটি আইডি একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। বর্তমানে এসব যাচাই কাগজপত্রের ভিত্তিতে করা হয়, যদিও ২০২২ সাল থেকে কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাইয়ের সুযোগ চালু হয়েছে।
গত বছরের নির্বাচনী ইশতেহারে লেবার এই পরিকল্পনার উল্লেখ করেনি। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসন পরিস্থিতি নিয়ে চাপ বাড়ায়, সরকারের আগ্রহ বেড়েছে।
ক্যাবিনেট অফিস মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফাডেন জানান, এই স্কিম সরকারি সেবার প্রবেশাধিকার উন্নয়নেও সহায়ক হতে পারে। তিনি সম্প্রতি এস্তোনিয়া সফর করেছেন, যেখানে ডিজিটাল পরিচয়ের মাধ্যমে নাগরিকরা স্বাস্থ্যসেবা, ভোটদান, ব্যাংকিংসহ নানা সেবা পান।
তবে বিরোধী দলগুলো এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছে। কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাদেনক বলেন, “বাধ্যতামূলক পরিচয় চালু করা একটি খুব গুরুতর পদক্ষেপ, যা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সঠিক বিতর্ক দরকার।” তিনি দাবি করেন, ডিজিটাল আইডি অবৈধভাবে কাজ করার সমস্যার সমাধান করবে না।
রিফর্ম ইউকে দল একে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার “কৌশলী চাল” হিসেবে অভিহিত করেছে। দলটির মতে, “যারা আগেই অভিবাসন আইন ভঙ্গ করেছেন, তারা হঠাৎ করে মান্য করবে; এ ধারণা হাস্যকর। ডিজিটাল আইডির কোনো প্রভাব পড়বে না অবৈধ কাজে। বরং এটি আইন মেনে চলা সাধারণ ব্রিটিশদের স্বাধীনতার ওপর বাড়তি হস্তক্ষেপ।”
লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলও বাধ্যতামূলক স্কিমের বিরোধিতা করেছে। দলের প্রযুক্তি বিষয়ক মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া কলিন্স বলেন, “মানুষকে কেবল ডিজিটাল আইডি না থাকায় বা না নিতে চাওয়ায় অপরাধী বানানো ঠিক নয়।”
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নিয়োগকর্তাদের সম্ভাব্য কর্মীদের কাজের অধিকার যাচাই করতে হয়। ২০২২ সাল থেকে ব্রিটিশ ও আইরিশ পাসপোর্টধারীরা সরকারি অনুমোদিত ডিজিটাল যাচাই সেবার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়া হোম অফিসের একটি অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিদেশি নাগরিকদের অভিবাসন অবস্থা যাচাই করা হয়। সরকার পর্যায়ক্রমে বিদেশি বাসিন্দাদের কাগজপত্র তুলে দিয়ে ই-ভিসা চালু করছে।
সরকারি কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন, বাধ্যতামূলক ডিজিটাল আইডি চালু হলে পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া আরও নির্ভুল ও একীভূত হবে কি না।
তবে নাগরিক অধিকার সংগঠন ওপেন রাইটস গ্রুপ সতর্ক করে জানিয়েছে, ই-ভিসা চালুর সময় তথ্য বিভ্রাট ও সিস্টেম সমস্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মতে, নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে নাগরিকদের প্রায়শই পরিচয় প্রমাণ করতে বাধ্য করা হবে, যা এক ধরনের “প্রি-ক্রাইম রাষ্ট্র” তৈরির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার তাঁর ভাষণে অভিবাসন ঘিরে তৈরি হওয়া জনমত ও উত্তেজনা নিয়েও বক্তব্য দেবেন।
সূত্র: বিবিসি