বিশ্বে প্রথমবারের মতো এআই-মানবীকে মন্ত্রী নিয়োগ দিলো আলবেনিয়া
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:২৮ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে নতুন ইতিহাস গড়ল আলবেনিয়া। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে একটি এআই-চালিত মানবীকে সরকারি মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করেছে ইউরোপের এই বলকান রাষ্ট্র।
আধুনিক প্রযুক্তির চরম বিকাশের সময়েই এমন পদক্ষেপ নেয় দেশটির সরকার। এই ডিজিটাল মন্ত্রীর নাম রাখা হয়েছে দিয়েল্লা, যার অর্থ ‘সূর্য’। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই এআই-মন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, দিয়েল্লার দায়িত্ব হবে সরকারি প্রকল্পে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা। বিশেষ করে, দরপত্র আহ্বান, সরকারি ক্রয় এবং ব্যয়ের পর্যবেক্ষণ, এসব বিষয় তদারকি করবেন দিয়েল্লা। মূলত, দুর্নীতি প্রতিরোধই হবে তার মুখ্য দায়িত্ব।
আধুনিক প্রযুক্তির এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে আরও বড় একটি কৌশলগত লক্ষ্য। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের প্রায় ২.৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ আলবেনিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হতে চাচ্ছে। তবে সেই পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দুর্নীতির বিস্তার।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী এদি রামা জানিয়েছেন, তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এখন দুর্নীতি দমন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দিয়েল্লার একমাত্র চাহিদা হলো চার্জ পূর্ণ থাকার মতো বিদ্যুৎ। এটা ছাড়া তার আর কোনো চাহিদা নেই, ফলে সে নিজে কখনও দুর্নীতিতে জড়াবে না। দিয়েল্লার নজরদারিতে প্রতিটি দরপত্র শতভাগ স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হবে। সরকারি ক্রয় কিংবা ব্যয় সংক্রান্ত তথ্যে কোনো গোঁজামিল থাকলে দিয়েল্লা তা সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, সে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।”
তিনি আরও বলেন, “ডায় নজরদারিতে প্রতিটি দরপত্র ১০০ শতাংশ স্বচ্ছ এবং দুর্নীতি-মুক্ত হবে। দরপত্র আহ্বান থেকে অর্থ বরাদ্দ করা, কোথাও দুর্নীতি ঢুকতে পারবে না।”
তবে সরকারের এই পদক্ষেপকে সবাই স্বাগত জানায়নি। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করে আলবেনিয়ার বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি কটাক্ষ করেছে। পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা গাজমেন্দ বারধি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমরা এদি রামা’র অনেক ভাঁড়ামোপূর্ণ কাজকর্ম দেখেছি। এসবের মধ্যে সর্বশেষটি হলো এই এআই মন্ত্রী।”
এদিকে প্রযুক্তিনির্ভর দুর্নীতি প্রতিরোধী এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পরিসরেও দৃষ্টি কেড়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই এআই-মন্ত্রীর নজরদারিতে আলবেনিয়া কতটা সফলভাবে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে পারে।