শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে আইসিইউতে
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৫৩ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২৫

রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। গ্রেপ্তারের পরদিন শনিবার (২৩ আগস্ট) তাকে দেশটির একটি সরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
শুক্রবার কলম্বোর অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিক্রমাসিংহেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। এরপর রাতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালের উপ-মহাপরিচালক রুকশান বেল্লানা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার পর থেকেই বিক্রমাসিংহে তীব্র পানিশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। গুরুতর জটিলতা এড়াতে তাকে হাসপাতালে আনা হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কারাগারের চিকিৎসা সুবিধা পর্যাপ্ত না হওয়ায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
এর আগে, শনিবার সকালে তাকে দেখতে কলম্বোর নিউ ম্যাগাজিন কারাগারে যান বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা। তারা জানান, সাবেক প্রেসিডেন্টের মনোবল এখনো দৃঢ়।
প্রধান বিরোধী দল সমাজি জনা বালাওয়েগায়ার (এসজেবি) সংসদ সদস্য নালিন বান্দারা জানান, “সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, নতুন সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে আমাদের এক মঞ্চে আসা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “বিক্রমাসিংহে দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, তিনি সরকারের দমননীতি মেনে নেবেন না।”
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে বামপন্থি নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকের কাছে পরাজয়ের পর রনিল বিক্রমাসিংহে নির্বাচিত কোনো পদে ছিলেন না, তবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
শুক্রবার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বিক্রমাসিংহেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, বিক্রমাসিংহে ওই ভ্রমণে সরকারি অর্থ থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ রুপি (৫৫ হাজার ডলার) ব্যয় করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি স্ত্রী মৈত্রিকে উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক অধ্যাপনার খেতাব গ্রহণে সঙ্গী করতে এই ভ্রমণ করেন।
তবে বিক্রমাসিংহে দাবি করেছেন, “এই সফরের ব্যয় আমি নিজেই বহন করেছি, কোনো রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ হয়নি।”
ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) মহাসচিব থালাথা আতুকোরালা বলেন, “সরকার বিক্রমাসিংহেকে ভয় পাচ্ছে বলেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে।”
শ্রীলঙ্কার ২২৫ আসনের সংসদে ইউএনপির মাত্র দুটি আসন রয়েছে। দলটির দাবি, সরকারের দমননীতির অংশ হিসেবেই সাবেক প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট হন বিক্রমাসিংহে। তার নেতৃত্বাধীন সরকারই ২০২৩ সালের শুরুর দিকে আইএমএফ থেকে ২.৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিশ্চিত করে। এরপর কর হার দ্বিগুণ এবং জ্বালানি ভর্তুকি বাতিল করে অর্থনীতি স্থিতিশীল করেন তিনি।
দিসানায়েকের সরকার দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে দুই সাবেক মন্ত্রীকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা চলছে।
চলতি মাসে দেশটির পুলিশ প্রধানকে অভিশংসন ও কারা প্রধানকে দুর্নীতির দায়ে দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: এএফপি