সৌদির 'না' যুক্তরাষ্ট্রকে: ইরানে হামলার পর ইসরাইলকে ক্ষেপণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত


সৌদির 'না' যুক্তরাষ্ট্রকে: ইরানে হামলার পর ইসরাইলকে ক্ষেপণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুরোধে সৌদি আরব সাড়া দেয়নি—ইরানের ব্যালিস্টিক হামলার পর ইসরাইলকে থাড ইন্টারসেপ্টর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রিয়াদ।

ইরান থেকে আসা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটালে, ওয়াশিংটন সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল তাদের ‘টার্মিনাল হাই অল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স’ (THAAD) সিস্টেম থেকে কিছু ইন্টারসেপ্টর সরবরাহ করতে। কিন্তু রিয়াদ সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালীন আমরা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছি। যখন কোথাও তা সম্ভব হয়নি, তখন বিকল্প পথ খুঁজেছি—সমঝোতা বা বিনিময়ের মাধ্যমে। তবে এতে কোনো নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করা হয়নি।’

বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরব ছিল এমন একটি রাষ্ট্র, যার কাছে প্রয়োজনীয় ইন্টারসেপ্টর মজুত ছিল এবং যারা এই সহায়তা দিতে পারত। মার্কিন কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ইরান শুধু ইসরাইলের জন্যই নয়, বরং উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্যও একটি সম্ভাব্য হুমকি হয়ে উঠেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ৩ জুলাই, যুদ্ধবিরতির ঠিক নয় দিন পর, সৌদি সামরিক বাহিনী প্রথমবারের মতো তাদের নিজস্ব অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা THAAD সিস্টেম আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় করে।

এর আগে, ওয়াশিংটনের আশঙ্কা ছিল যে, ইরানের টানা ব্যালিস্টিক হামলার কারণে ইসরাইলের জন্য সংরক্ষিত যুক্তরাষ্ট্রীয় ইন্টারসেপ্টরের মজুদ সংকটাপন্ন হয়ে উঠতে পারে।

মিডল ইস্ট আই তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ইরানের হামলায় ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—বিশেষ করে অ্যারো ও THAAD ইন্টারসেপ্টর—দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল। পরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান এই তথ্য নিশ্চিত করে।

দ্য গার্ডিয়ান আরও জানায়, সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বজুড়ে তাদের সামরিক পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় 'প্যাট্রিয়ট' ইন্টারসেপ্টরের মাত্র ২৫ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল।

ইসরাইলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা থাকলেও, ইরান একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরাইলের ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। দ্য টেলিগ্রাফ এর তথ্যমতে, এসব ক্ষেপণাস্ত্রের অন্তত পাঁচটি ইসরাইলের সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হানে।

বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এই সংঘাত ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছে। মিচেল ইনস্টিটিউট ফর এরোস্পেস স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, ‘আমাদের ইন্টারসেপ্টরের সংখ্যা সীমিত, তেমনি আমাদের উৎপাদন সক্ষমতাও।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরও উল্লেখ করে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানত যে সৌদি আরবের হাতে THAAD ইন্টারসেপ্টর রয়েছে। তারপরও তারা রিয়াদের সঙ্গে আলোচনা চালায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল যেন তারা ইসরাইলকে ইন্টারসেপ্টর সহায়তা দেয়। যদিও কোনো পক্ষ নিশ্চিত করেনি শেষ পর্যন্ত এই সহায়তা আদৌ এসেছে কি না।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, ইরান-ইসরাইল সংঘাত উপসাগরীয় দেশগুলোকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। তাদের উপলব্ধি, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপরাজেয় নয়। এর ফলে, অঞ্চলটির তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলো কূটনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে।

একজন আরব কূটনীতিক মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধের ফল ইতিবাচক। ইসরাইল বুঝেছে, শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের মূল্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব বর্তমানে ধীরে ধীরে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে এবং প্রয়োজনে ইরানের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে হাঁটতে পারে। ইউরেশিয়া গ্রুপ-এর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান ফিরাস মাকসাদ বলেন, ‘সিরিয়া, লেবানন, গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইসরাইলের একের পর এক হামলা সৌদি আরবের মনোভাব আরও কঠোর করে তুলেছে। এখন, যখন ইরান দুর্বল অবস্থানে, সৌদি আরব তাদের নতুন কৌশল নির্ধারণ করছে।’

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×