সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামিদের খোঁজ নেই, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা


সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামিদের খোঁজ নেই, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ঢালিউডের কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনকে আসামি করে হত্যার মামলা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা শহরের ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক মামলাটি রমনা থানায় তদন্তের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক জানান, আসামিদের দেশত্যাগ রোধ করতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, "আদালতের নির্দেশে সালমান শাহ হত্যা মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলায় ১১ জনকে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার রুজুর পর থেকেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।"

ওসি জানান, "মামলার ১১ আসামির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বাইরে থাকতে পারেন। দেশের মধ্যে থাকা আসামিদের শনাক্তের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদের যাতে দেশত্যাগ না করতে পারে, সেজন্য তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "মামলার তদন্তে কোনো ধরনের চাপ নেই। শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।"

তবে মামলার নির্দেশ দেওয়ার পর সামিরা হককে চার দিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে এবং সরাসরি বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে মামলার আরেক আসামি ডন হককে নিয়মিত ফোন এবং বার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

গত ২১ অক্টোবর মধ্যরাতে রাজধানীর রমনা থানায় চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম। এজাহারে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সামিরা হককে, এছাড়া ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডনসহ আরও কয়েকজনকে। মোট ১১ জনকে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ তদন্তযাত্রা, যা প্রায় তিন দশক ধরে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে চলে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে জানায়।

তবে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই এই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন এবং দাবি করেছেন, তার ছেলে হত্যা হয়েছে।

নব্বইয়ের দশকে মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্রজীবনে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করে সালমান শাহ দর্শক ও সমালোচকের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও তার নাম চিরস্মরণীয়। সম্প্রতি মামলার পুনরুজ্জীবন এবং আদালতের নির্দেশের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তার ভক্তদের মধ্যে একধরনের উত্তেজনা ও আশার অনুভূতি দেখা দিয়েছে। সালমান শাহর সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের অপেক্ষায় ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর মৃত্যুর দিন তিনি ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবির ডাবিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ডাবিংয়ের সময় নায়িকা শাবনূর উপস্থিত ছিলেন। খুনসুটি ও আনন্দময় মুহূর্তের মাঝেই কিছু অশান্তি লুকিয়ে ছিল। সালমান শাহ তার বাবাকে ফোন করে সামিরা হককে সাউন্ড কমপ্লেক্সে আনার অনুরোধ করেন। পরে বাবা সামিরাকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছান। সাউন্ড কমপ্লেক্সে সামিরা দেখেন সালমান ও শাবনূর ডাবিং রুমে খুনসুটি করছেন। কিছু সময়ের আড্ডা শেষে সালমান প্রধান ফটকের কাছে নেমে যান এবং ডাবিং রুমে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত কোনো ডাবিং হয়নি। রাত ১১টায় পরিচালক বাদল খন্দকার তাকে নিউ ইস্কাটন রোডের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেন।

চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম জানিয়েছেন, শেষের দিকে সালমান মানসিক চাপে ছিলেন। পারিবারিক জটিলতা এবং প্রযোজকদের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব তাকে চাপের মধ্যে রেখেছিল। কিছু সময় সমিতিতে নিষিদ্ধও হয়েছিলেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×