বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নিয়েছে ছেলে, তদন্তে ইউজিসি
- শিক্ষা ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:৪৭ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২৫

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (ইইউবি) প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নিয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মকবুল আহমেদ খান অভিযোগ করেছেন, তার ছেলে আহমেদ ফরহাদ খান তানিম জালিয়াতির মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, বিতর্কিত ট্রাস্টি বোর্ড আইন লঙ্ঘন করে নতুন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে, ট্রাস্টি বোর্ডের বৈধতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, "ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমাদের লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।" তিনি আরও বলেন, "ভিসি নিয়োগে একটি প্যানেল হয়, যা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে হয়। কিন্তু এর আগে ট্রাস্টি বোর্ড বৈধ কিনা, সেটি যাচাই জরুরি।"
প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ড. মকবুল আহমেদ দাবি করেন, ২০১০ সালে অনুমোদন পাওয়া এবং ২০১২ সালে সরকারি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়টি জনকল্যাণে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু ২০২৪ সালে ছেলে ও তার আত্মীয় মিলে তাকে ও একজন জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে সরিয়ে দেন। "তারা ভুয়া বোর্ড সভা ও জাল রেজুলেশনের মাধ্যমে আমাকে বাদ দেয় এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরে পরিবর্তনের অনুমোদন নেয়," অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে বর্তমান ট্রাস্টি চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান তানিম মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফোন সংযোগ কেটে দেন।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২৫ জুন ইইউবি'র উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলিম দাদের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ১৬ জুলাই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মরতুজাকে ভারপ্রাপ্ত ভিসি করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করা হয়নি।
আইন অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর বা ট্রেজারার সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, কিন্তু বাইরের কাউকে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই। ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, "আইন লঙ্ঘন করে কোনও নিয়োগ হলে সেটি বাতিলযোগ্য।"
ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম তালুকদার। অন্যান্য সদস্যরা হলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সুলতান মাহমুদ এবং সহকারী পরিচালক পারভেজ গাজী।
ড. মকবুল আহমেদের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর চারজন বৈধ ট্রাস্টিকে পদত্যাগকারী দেখিয়ে ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করা হয় এবং অবৈধ ট্রাস্টিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের আবেদন জমা দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।