৭০ শতাংশের বেশি লেনদেন ডিজিটাল পেমেন্টের বাইরে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৮:২৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে আর্থিক খাতে ডিজিটাল লেনদেন এখনও সীমিত: মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমের মাধ্যমে হচ্ছে, বাকী ৭০ শতাংশের বেশি প্রথাগত ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তথ্যটি বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. এজাজুল ইসলাম।
সভায় উঠে এসেছে, ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতে সম্ভাবনা থাকলেও সহায়ক নীতিমালা, ব্যবহারকারীর আস্থা, অবকাঠামোর ঘাটতি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা এবং যন্ত্রপাতির উচ্চমূল্যের কারণে এ খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেন, “সরকার, বেসরকারি খাত এবং শিক্ষাক্ষেত্র একযোগে ডিজিটাল সেবার আধুনিকায়নে কাজ করছে। নাগরিক ডাটা সংরক্ষণের ঘাটতির কারণে প্রায় ৫ কোটি নাগরিকের তথ্য ডার্কওয়েবে পাওয়া গেছে। এজন্য ডাটা এনক্রিপশন ও নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার ব্যক্তিগত ডাটা সংরক্ষণ অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা এক মাসের মধ্যে কার্যকর হবে।”
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ সভায় বলেন, “২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু হলেও বর্তমানে মাত্র ৫৪ শতাংশ মানুষ এ সেবা ব্যবহার করছে। সাইবার নিরাপত্তা, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ এবং আস্থার ঘাটতির কারণে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।”
সভায় বিশেষ অতিথি ডা. মো. এজাজুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মানি সার্কুলেশন হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে জনগণের হাতে রয়েছে। তিনি বলেন, “দেশে এখনও মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে, বাকি অংশ প্রথাগত ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।”
রবি আজিয়াটা পিএলসির হেড অব কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ সানজিদ হাসান উপস্থাপনা করেন, “২০২৫ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ডিজিটাল ব্যাংকিং বাজার ৪,৬৭৮.৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও ২০৩৩ সালে তা ১১,২৩৮.৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। বাংলাদেশেও এ খাতের বাজার ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণকারীরা—ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি) ইলিয়াস জিকো, শান্তা এসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, সিটি ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান, বেটলস্ সাইবার সিকিউরিটি লিমিটেডের চিফ সাইবার অপারেশন্স অফিসার শাহী মির্জা এবং ওমেগা এক্সিম লিমিটেডের পরিচালক রেজওয়ান আলী—ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রসারে সাইবার নিরাপত্তা, গ্রাহক সুরক্ষা, সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ব্লকচেইনভিত্তিক স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বক্তারা আরও বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাকে সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সভায় ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।