পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন দেবে সরকার


পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন দেবে সরকার

দুর্নীতি ও অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যাতে সরকারেরও সম্মতি রয়েছে। নতুন ব্যাংকের জন্য সরকার প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন দেবে। মোট মূলধন হবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা এটিকে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকে রূপান্তর করবে।

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক হলো - ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। এদের মধ্যে প্রথম চারটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন, যেটি সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারও ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।

সরকার চায় এই একীভূতকরণ কার্যক্রম এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে শেষ করতে। এ লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরি করবে। গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অনলাইনে সভায় যুক্ত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত হওয়ার আগে নতুন ব্যাংকটির অনুমোদন দেবে। সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। সরকার এই ব্যাংকে মূলধন দেবে এবং একীভূত ব্যাংকগুলোর সব সম্পদ ও দায় নতুন ব্যাংকের আওতায় চলে আসবে। মুনাফা অর্জন শুরু হলে সরকার তার শেয়ার বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করে বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেবে। বড় আমানতকারীদের শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে, তবে ছোট আমানতকারীরা চাইলে টাকা তুলে নিতে পারবেন, এতে কোনো বাধা থাকবে না। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এতে গ্রাহক আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটবে।

ওয়ার্কিং কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহম্মেদ, যার সঙ্গে থাকবেন অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধিরা। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংকের শুনানি নেয়। সেখানে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণে সম্মত হয়। তবে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আরও সময় চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশি-বিদেশি নিরীক্ষকদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে জানিয়ে দিয়েছে, একীভূত হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

গত বছর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে আসে পরিবর্তন। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং দায়িত্ব নিয়ে আগের সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নেন। তিনি এক সভায় বলেন, “ব্যাংক একীভূত হবেই, এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই এবং আমানতকারীদের টাকা নিরাপদ থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “সরকার আমানতকারীদের দায়িত্ব নেবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×