ডিসেম্বরের মধ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক


ডিসেম্বরের মধ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন আইন জারি করে বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ বাতিল করা হবে। এতে করে ব্যাংকটির কাঠামো ও নেতৃত্বে আসবে বড় পরিবর্তন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। এর ফলে পর্ষদে আর কোনো সরকারি আমলা থাকবেন না এবং গভর্নর হবেন মন্ত্রী পদমর্যাদার। রাষ্ট্রপতি গভর্নর নিয়োগ দেবেন সংসদের অনুমোদন এবং প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ পরিচালনা পর্ষদ সভায় এই খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। নয় সদস্যের পর্ষদের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনজন বর্তমান সচিব এবং একজন সাবেক অর্থ সচিবও। খসড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে কেউ আপত্তি তোলেননি। তবে কয়েকজন সদস্য গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের মেয়াদ ছয় বছর থেকে কমিয়ে তিন বছর করার পরামর্শ দেন এবং ভাষাগত দিক নিয়ে কিছু মত দেন।

নতুন আইনের খসড়া তৈরিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। আইনি দিক থেকে পরামর্শ দিচ্ছে ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এবং একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, খসড়ার একটি অনুলিপি ১৫ আগস্টের মধ্যে অর্থ ও আইন উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হবে। উপদেষ্টাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী। তবে নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহির আওতায় রেখে এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে। আট সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে কোনো সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন না। আট পরিচালকের মধ্যে গভর্নর হবেন চেয়ারম্যান। আর গভর্নর মনোনীত দুজন ডেপুটি গভর্নর থাকবেন। গভর্নরের দেওয়া তালিকা থেকে বাকি পরিচালক নিয়োগ দেবে সরকার। পরিচালক পদে যাদের নাম দেওয়া হবে, তাদের অবশ্যই অর্থনীতি, ব্যাংকিং, হিসাবরক্ষণ, অর্থ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং, বাণিজ্য, শিল্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অথবা আইনের মতো ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ছাড়াও আরও পাঁচটি আইন সংশোধন ও প্রণয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। আইনগুলো হলো– ব্যাংক কোম্পানি আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, আমানত বীমা আইন সংশোধন এবং খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন আইন প্রণয়ন। এ ছাড়া ইতোমধ্যে প্রণীত ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঠামোতে এই ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×