ভারতের নিষেধাজ্ঞা স্থলপথে বাংলাদেশের আরও ৪ পাটপণ্য আমদানিতে


ভারতের নিষেধাজ্ঞা স্থলপথে বাংলাদেশের আরও ৪ পাটপণ্য আমদানিতে

ভারত স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে আরও চার ধরনের পাটপণ্য আমদানিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে করে দুই দেশের মধ্যে এই খাতের বাণিজ্যে আবারও বড় ধাক্কা লাগছে। তবে, সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য পাঠানোর সুযোগ এখনও খোলা রয়েছে।

সোমবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানায়, যা একই দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে।

নিষিদ্ধ নতুন পণ্যের তালিকায় রয়েছে — পাটের তৈরি বস্তা ও ব্যাগ, ব্লিসড ও আনব্লিসড বোনা কাপড়, পাটের সুতা ও দড়ি, এবং পাটের সুতা দিয়ে তৈরি তার।

এই নিয়ে গত ছয় মাসে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আমদানি সীমিত করল ভারত। এর আগে, ১৭ মে ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, কাঠের আসবাবপত্র, সুতা ও সুতার উপজাত, ফলজাত পানীয়সহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

এরও আগে, ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়। ২৭ জুন জারি হওয়া আরেক ঘোষণায় কাঁচা পাট, পাটের রোল, সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড়ের স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশই স্থলবন্দর হয়ে ভারতে রপ্তানি হয়, সময় ও খরচ সাশ্রয়ের কারণে। ফলে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি বাজারে প্রবেশে বড় বাধা তৈরি করছে।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ বলেন, "ভারত এরকম অশুল্ক বাধা তৈরি করতে পারে এমন আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল তাদের। সে বিবেচনায় কিছু প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে পলিথিনের পরিবর্তে পাটের চাহিদা বাড়ানোর বেশ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাধারণ পাটপণ্য রপ্তানি না করে মূল্য সংযোজিত দামি পণ্য পৃথিবীর যে কোনো দেশে যাতে রপ্তানি হতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভারতের এ সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ‘সাপে বর' হবে।"

বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সংগঠনের সভাপতি এবং ক্রিয়েশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, "বাংলাদেশের পাটপণ্যের ভারতীয় আমদানিকারকরা মূলত কলকাতাভিত্তিক। স্থলপথে সহজেই কলকাতায় পণ্য পৌছানোর সুবিধা দু’দেশের জন্যই লাভজনক ছিল। তিন মাস আগে কিছু পণ্যে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দরে পণ্য পৌছানো এবং সেখান থেকে আবার কলকাতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা হয়। এতে আমদানিকারকদের পরিবহন ব্যয় বাড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ গুণ। সময়ও লাগছে দ্বিগুনের মত। নতুন করে আরও চার পণ্য এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার কারণে রপ্তানি বাজার হিসেবে ভারতকে আর ধরে রাখা বাণিজ্যিকভাবে সম্ভব হবে না।"

তিনি আরও মনে করেন, "ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজার লক্ষ্য করে পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, মান উন্নয়ন এবং মূল্য সযোজন করার পরিকল্পনা নেওয়া গেলে কাঁচাপাট রপ্তানির এ প্রতিবন্ধকতা পাট শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনতে পারে।"

বাংলাদেশের জন্য ভারতীয় বাজারে প্রবেশ ক্রমাগত কঠিন হয়ে উঠলেও, সংশ্লিষ্টরা এটিকে একটি সম্ভাবনার জানালাও হিসেবে দেখছেন — বিশেষ করে বহির্বিশ্বে মূল্য সংযোজিত পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের দিক থেকে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×