আলোচনায় মনে হয়নি ২৫টি বোয়িং কেনার ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে: উপদেষ্টা


আলোচনায় মনে হয়নি ২৫টি বোয়িং কেনার ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে: উপদেষ্টা

বাংলাদেশের কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি থাকলেও আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের তেমন আগ্রহ ছিল না— এমন মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় দফার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার শেষ দিনে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে দুই দেশ একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। ওই আলোচনায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দেয়। পাশাপাশি, বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয় পাঁচ বছরে ৩৫ লাখ টন গম কেনার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে।

চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়, যা কার্যকর হওয়ার কথা ১ আগস্ট থেকে। তবে প্রস্তুতির জন্য ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তো‌জাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, “আমাদের বাণিজ্য আলোচনার সময় মনে হয়নি- বাংলাদেশের ২৫টি বোয়িং কেনার ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এটিকে তারা একবারের জন্যও আলোচনার মধ্যে আনেনি। বোয়িং আমার জানামতে গত বছর মাত্র ১২টি প্লেন বানিয়েছে। সেখানে এই চুক্তি অনুযায়ী তারা প্রথম বিমান হয়তো সরবরাহ করতে পারবে ২০৩৭ সালে। এতো দ্রুত সরবরাহে তাদের সেই সক্ষমতা নেই। তারা যে ততোটা আগ্রহী ছিল তা না।”

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশাল খাদ্য আমদানির বাজারে অংশ নিতে চায়, যা বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের। “যুক্তরাষ্ট্র কৃষিপণ্যের একটি অন্যতম বৃহৎ দেশ। আমরা যদি প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমাদের কৃষিপণ্যের সংস্থান করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের ভোক্তাদের যৌক্তিক মূল্যে পণ্য দিতে পারবো। বাজার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। মূলত, জ্বালানি পণ্য ও কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভর করে আমরা চেষ্টা করেছি বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে,” বলেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, বোয়িং প্লেন আমদানি এমনিতেই বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয়। “যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্বিকভাবে গত বছর ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি করেছি। সেখানে আমরা বৈশ্বিক বাজার থেকে খাদ্যপণ্য ২০ বিলিয়ন ডলার আমদানি করি। সেখানে আমাদের ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলার। আমরা যদি এখানে ২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বৃদ্ধি করতে পারি তাহলে একটা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেটা তুলা হোক, সয়াবিন হোক, ভুট্টা হোক, গম হোক। এখানে বোয়িং প্লেন খুব গুরুত্বপূর্ণ না। বোয়িং প্লেন তো আপনি প্রতিদিন কেনেন না।”

বোয়িং কেনা আদৌ দরকার ছিল কি না, এমন প্রশ্নে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “বিমানের যে পরিচালন সক্ষমতা ও ব্যবসায়িক অবস্থা এই পরিস্থিতিতে আমাদের বিমানবন্দর দিয়ে গত বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে। তার মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্ভবত লাখ বিশেক যাত্রী বহন করেছে। তার মানে আমাদের কোটি খানেক যাত্রীর বাজার আমাদের রয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা না থাকার কারণে সেটি বৃদ্ধি করতে পারছি না। সুতরাং ২৫টি বিমান ওই বিবেচনায় কিছুই না। আমাদের এর থেকে আরও বেশি কিছু দরকার।”

তিনি আরও জানান, বিমান খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ চলমান রয়েছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×