মার্কিন শুল্ক কার্যকর ১ আগস্ট, চুক্তিহীন থাকছে বাংলাদেশ


মার্কিন শুল্ক কার্যকর ১ আগস্ট, চুক্তিহীন থাকছে বাংলাদেশ

মাত্র কয়েক দিন পরই শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ব্যবস্থা, কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। সময়ের চাপ বাড়লেও আলোচনা চলছে শেষ মুহূর্তে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতি আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হচ্ছে। তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে এলেও ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তির পথে এখনও বাংলাদেশ কোনো চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায়নি।

রোববার (২৭ জুলাই) স্থানীয় সময় ফক্স নিউজের ‘ফক্স নিউজ সানডে’ অনুষ্ঠানে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক স্পষ্ট করে জানান, নির্ধারিত সময়েই শুল্ক কার্যকর হবে এবং এই সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। তিনি আরও বলেন, "তবে শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরও আলোচনার দরজা খোলা থাকবে।"

এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক চুক্তিতে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও একটি চুক্তি হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এখনো বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে যেতে পারেনি।

যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে, তারা যে হারে শুল্ক দিতে সম্মত হয়েছে, তা এপ্রিল মাসে ঘোষিত ১০ শতাংশ হারের চেয়ে বেশি। তবে যারা এখনো চুক্তিবদ্ধ নয়, তাদের জন্য নির্ধারিত সম্ভাব্য শুল্কের তুলনায় এটি তুলনামূলকভাবে কম।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। এই প্রতিনিধিরা ওয়াশিংটনে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে তিন দিনব্যাপী আলোচনায় বসবেন। আলোচনার মূল বিষয়বস্তুতে থাকবে শুল্ক হার, মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার, এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাল্টা শুল্ক কমানোর আশায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েকটি কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে রয়েছে বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি বিমান কেনার অর্ডার, প্রতিবছর ৭ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি এবং তুলা ও সয়াবিন আমদানির পরিমাণ তিনগুণ করার ঘোষণা। পাশাপাশি বর্তমানে ৩০ কোটি ডলারের ভোজ্যতেল আমদানিকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, "বাজারের বাস্তবতা মাথায় রেখে আমরা পারস্পরিক স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছি। এখন কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়, যাতে পাল্টা শুল্কের চাপ কিছুটা কমানো যায়।" তিনি যোগ করেন, "আগে ১৪টি বোয়িং কেনার অর্ডার ছিল, সেটি এখন ২৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রেও আগাম চুক্তি হয়েছে। এটা শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং সরবরাহ চেইন নিরাপদ রাখা এবং বিকল্প বাজার গড়ে তোলার অংশ।"

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রতিশ্রুতিগুলো একক নির্ভরতার প্রতীক নয়। ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য উৎস থেকেও আমদানি করা হবে। তবে বর্তমান আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মার্কিন শুল্কহার কমানোর বিষয়। কারণ, ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপিত হলে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাণিজ্যসচিব আরও জানান, "যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিটি অনুচ্ছেদের জবাব আমরা দিয়েছি। এখন সময় এসেছে সরাসরি আলোচনার। চীনের বাজার থেকে কিছু উৎপাদন সরিয়ে বাংলাদেশে স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেটি কাজে লাগাতে চাই।"

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, "মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে, তা ধরে রাখতে হলে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো শুল্কছাড় দরকার। না হলে বাজার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।"

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×