পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ায় ক্লাসে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা


পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ায় ক্লাসে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা

রংপুরের হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ সেপ্টেম্বর এক অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় একজন অভিভাবক পরশুরাম থানায় জিডি করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানাচ্ছেন, ইমতিয়াজ ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফল শুনে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ‘অকৃতকার্য’ শিক্ষার্থীদের একে একে বেত্রাঘাত করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইমতিয়াজ ফেব্রুয়ারিতে হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হন। তখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। পরে ১৮ জুলাই বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক পদে নির্বাচিত হন। বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. শাহরিয়ার জানান, টিফিনের পর ক্লাস চলাকালীন ইমতিয়াজ মোটরসাইকেলে এসে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফল জানতে চান এবং একে একে পেটান। মেয়েদেরও বঞ্চিত করা হয়নি। মারধরের সময় বেত ভেঙে যায়। শিমুল শর্মা জানান, বই দেরিতে পাওয়া ও নতুন পাঠ্যক্রমের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে।

ভুক্তভোগী ও অভিভাবকদের দাবি, ৫০-এর বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আইরিন আক্তারকে জ্বর ও ব্যথার কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজে দুদিন ভর্তি রাখা হয়। আইরিনের চাচা ইয়াকুব আলী বলেন, “আমন করি ছাওয়াক কেউ মারে! আইরিনের হাতসহ শরীর ফুলে যায়।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, “আমাদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়েছিল, কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি বলে প্রতিবাদ করতে পারিনি।”

অভিভাবক দুলাল মিয়া বলেন, বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে পরবর্তীতে ইমতিয়াজ ক্ষমা চেয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটি কোনোভাবেই শাসন নয়, এটি শিক্ষার্থী নির্যাতন এবং ফৌজদারি অপরাধ।”

ইমতিয়াজ দাবি করেছেন, “আমি স্কুলের সভাপতি হিসেবে ছয় মাস ধরে স্কুলে পরিশ্রম করছি। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু রাগারাগি করেছি, অন্য কিছু নয়। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।”

ঘটনার পর দুদিনে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার চেয়েছেন। একজন অভিভাবক অনলাইনে জিডি করেছেন। প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, “ভালো রেজাল্টের জন্য শিক্ষার্থীদের শাসন করেছিলেন, অন্য কিছু নয়। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।”

পরশুরাম থানার ওসি মাইদুল ইসলাম জানান, “ইমতিয়াজ সভাপতি হিসেবে স্কুলে গিয়েছিলেন। একজন অভিভাবক জিডি করেছেন এবং পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।”
রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জানাননি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×