ব্যবসায়ীদের অনড় অবস্থানে ভোজ্যতেলের দাম কমানো অনিশ্চিত


ব্যবসায়ীদের অনড় অবস্থানে ভোজ্যতেলের দাম কমানো অনিশ্চিত

ভোজ্যতেলের মূল্য কমানোর লক্ষ্যে সরকারের দুই দফা আলোচনার পরও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। ব্যবসায়ীদের অনমনীয় অবস্থানের কারণে এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।

রোববার, ২৭ জুলাই বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকটি হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

সূত্র বলছে, দীর্ঘ আলোচনার পরও ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে দাম কমানোর বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, রোববারের বৈঠকেও ব্যবসায়ীরা মূল্য হ্রাসে একমত হননি। ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও বাজারমূল্য নিয়ে আয়োজিত প্রথম বৈঠকেও ব্যবসায়ীদের একই ধরনের আপত্তি দেখা যায়।

দুই দফা এই আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং প্রতিযোগিতা কমিশনের পাশাপাশি সিটি, মেঘনা, টি কে, বসুন্ধরা সহ বিভিন্ন ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

প্রথম বৈঠকে ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের ভোজ্যতেলের দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের এফওবি মূল্য ছিল প্রতি টন ১,০৭৯ মার্কিন ডলার এবং পাম অয়েলের মূল্য ছিল ১,০১৭ ডলার। অথচ গত ১৫ এপ্রিল এই দাম ছিল যথাক্রমে ১,০৩৩ ও ১,০৫২ ডলার। অর্থাৎ, এ সময়ের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ০.৭ শতাংশ এবং পাম অয়েলের দাম কমেছে ৩ শতাংশ।

এই দাম অনুযায়ী ভোক্তাপর্যায়ে খোলা পাম অয়েলে প্রতি লিটারে ১৯ টাকা এবং সয়াবিন তেলে এক টাকা কমানোর প্রস্তাব করে কমিশন।

তবে ব্যবসায়ীরা এই বিশ্লেষণের সাথে একমত নন। তাদের দাবি, “ট্যারিফ কমিশন আন্তর্জাতিক বাজারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের যে দাম, তা প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি।”

তারা আরও অভিযোগ করেন, সয়াবিন তেলের উৎপাদন ব্যয় নিরূপণে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ের ভ্যাটের হিসাব সঠিকভাবে ধরা হয়নি। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারের দামও যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি, যার ফলে চূড়ান্ত হিসাব ভুল হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করেছিল। সে সময় এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত হয় ১৮৯ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৯২২ টাকা, এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা এবং এক লিটার পাম অয়েলের দাম ছিল ১৬৯ টাকা। এরপর থেকে আর কোনো মূল্য সমন্বয় করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সাধারণত ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। তবে এবার তারা কোনো প্রস্তাবনা দেয়নি; বরং মন্ত্রণালয়ই প্রথম থেকে উদ্যোগ নিয়েছে দাম পুনর্নির্ধারণে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×