রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ব্যাংকের কোনো নীতিমালা‌ কাজ করবে না: গভর্নর


February 4 2025/bank bd dw.webp

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং খাতের তদারকি ব্যবস্থায় সময়োপযোগী ও মৌলিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিবর্তন ছাড়া ব্যাংক খাতে কোনো নীতিমালা বাস্তবভাবে কাজ করবে না বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর বলেন, ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে এই নতুন তদারকি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ইতিবাচক ফল পাওয়ায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব ৬১ তফসিলি ব্যাংকে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকে গঠন করা হবে আলাদা তদারকি কমিটি, যারা চারপাশ থেকে বা ‘৩৬০ ডিগ্রি’ বিশ্লেষণ করবে।

সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত গড়ে উঠুক। কিন্তু তার জন্য রাজনৈতিক মানসিকতায় পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজে যেন হস্তক্ষেপ না হয়, সেটিই সবচেয়ে জরুরি।

ব্যাংক মার্জার নিয়ে তিনি বলেন, ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করা হবে। যদি তারা যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারে তাহলে মার্জ হবে না। তবে এই ব্যাংকগুলোর অবস্থান খুবই দুর্বল, তাই মার্জের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ (বোর্ড) পুনর্গঠন প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, কিছু ব্যাংক বোর্ড পরিবর্তনের পর ভালো ফল দিচ্ছে। তবে যারা উন্নতি করছে না, তাদের বোর্ডও আবার গঠন করা হতে পারে।

তিনি জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে কেন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে না। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধের দিকে এগোতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, আইনগত, পরিচালনাগত ও কৌশলগত ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হবে। ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে ব্যাংকগুলো আলাদাভাবে মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্রুত হস্তক্ষেপ সম্ভব হবে।

এই কাঠামো কার্যকর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গঠন করা হচ্ছে নতুন বিভাগ তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ তদারকি বিভাগ।

প্রতিটি ব্যাংকের জন্য থাকবে নির্ধারিত তদারকি দল। তদারকির জন্য আধুনিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি গড়ে তোলা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় তথ্য প্ল্যাটফর্ম, যা ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।

প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়াতে তফসিলি ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই কাজে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো সহযোগিতা করছে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধু রিজার্ভ ডলারে না রেখে পণ্য মুদ্রা বা সম্পদে সঞ্চয়ের সম্ভাবনাও আমরা বিবেচনা করছি।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এই রূপান্তরের ফলে ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতা, প্রযুক্তিনির্ভরতা ও তদারকির ফলপ্রসূতা বাড়বে। তদারকি ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও কার্যকর হবে এবং দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা সুসংহত হবে।

সংস্থাটি বলছে, এই দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার যাত্রায় সব অংশীজনের সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে সম্মিলিতভাবে একটি টেকসই ও ঝুঁকিসচেতন ব্যাংকিং পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×