ইরান ও ফিলিস্তিনের পক্ষ নিল ব্রিকস জোটের নেতারা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:৫২ পিএম, ০৭ জুলাই ২০২৫

ব্রিকস জোটের নেতারা গত মাসে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের চালানো হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, তারা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রতি জোরাল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। খবর আল-জাজিরার।
রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ঘোষণাপত্রে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য ছিল না যেখানে ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাশিয়া প্রধান আগ্রাসী শক্তি হিসেবে অভিযুক্ত। উল্টো তারা ইউক্রেনের রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার সমালোচনা করেছে।
ট্রাম্পের ট্যারিফের সমালোচনা
ঘোষণাপত্রে বিশ্ব বাণিজ্যে ‘একতরফা শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা’ আরোপের সমালোচনা করা হয়, যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার পরিপন্থী। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তথাপি বিশ্লেষকরা এটিকে তার রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতির প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।
প্রতিবাদে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যে কোনো দেশ যারা ব্রিকসের ‘আমেরিকা-বিরোধী নীতি’তে যুক্ত হবে, তাদের উপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে।
কারা ছিল এই সম্মেলনে
ব্রিকসের প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। সদস্য ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত হয়। ২০২৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইথিওপিয়া, মিসর ও ইন্দোনেশিয়া নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। এবারের সম্মেলনে নতুন অংশীদার দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বেলারুশ, বলিভিয়া, কাজাখস্তান, কিউবা, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, উগান্ডা ও উজবেকিস্তান।
রিও সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। বেশিরভাগ দেশের শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকলেও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান অনুপস্থিত ছিলেন। চীনের প্রতিনিধি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, রাশিয়ার ও ইরানের পক্ষে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ইরানে ইসরাইলের হামলার সমালোচনা
ইসরাইল ১৩ জুন ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরাইলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার-বাস্টার বোমা ফেলে হামলায় অংশ নেয়। ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
ব্রিকস এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পারমাণবিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
গাজা যুদ্ধ ও ফিলিস্তিন
ব্রিকস গাজার ওপর ইসরাইলি আগ্রাসন, বিশেষ করে খাদ্য সরবরাহকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে। তারা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেছে, গাজা ও পশ্চিম তীর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।
গাজা যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৭,০০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা
ঘোষণায় ব্রিকস একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে বলেছে, এসব ব্যবস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ইরান ও রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার। ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে।
পেহেলগাম হামলার নিন্দা
গত এপ্রিলে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ব্রিকস এ ঘটনার কঠোর নিন্দা জানায়। তবে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়নি, যদিও ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নীরবতা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্রিকস বিবৃতিতে কোনো সরাসরি মন্তব্য ছিল না। শুধু বলা হয়, ‘টেকসই শান্তি সমাধানের’ আহ্বান জানানো হয়। তবে ইউক্রেনের রুশ ভূখণ্ডে হামলার নিন্দা জানানো হয়, যেখানে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।