এফবিসিসিআই নির্বাচন: ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে আহ্বান জানালেন জাকির-আতিক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:২৬ পিএম, ১৯ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২ এবং তার আওতায় গঠিত বিধিমালা ২০২৩। এই আইনের ফলে দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর পরিচালনা পর্ষদে ব্যবসায়ীদের সরাসরি ভোটাধিকার সীমিত হয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট ভাষায় তাদের মতামত তুলে ধরেন।
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নির্বাচনটি হবে।
এই সম্মেলনের আয়োজন করে বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ, যা বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (FBCCI)-এর অনুমোদিত একটি প্ল্যাটফর্ম। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক এবং আসন্ন FBCCI সভাপতি পদপ্রার্থী জনাব জাকির হোসেন নয়ন, এবং মিডিয়া ও লিয়াজো কমিটির চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আতিকুর রহমান।
❝ব্যবসায়ীদের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই❞
আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন বলেন, “এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে, অথচ যারা এই অগ্রযাত্রার মূল চালিকাশক্তি — সেই ব্যবসায়ীরাই আজ নেতৃত্ব নির্বাচনে পিছিয়ে পড়েছেন। FBCCI নির্বাচনকে যদি অংশগ্রহণমূলক না রাখা হয়, তবে সেটা হবে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার জন্য এক বড় প্রতিবন্ধকতা।”
তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২-এর বিধান অনুযায়ী, এখন নির্বাচিত পরিচালকদের মাধ্যমেই সভাপতি নির্বাচন হবে। এভাবে ভোটাধিকার হরণ করে যদি নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়, তবে ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে আস্থা ভঙ্গ হবে।”
আতিকুর রহমান, যিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও FBCCI-এর বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের মিডিয়া ও লিয়াজো কমিটির চেয়ারম্যান, বলেন: “ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, নেতৃত্ব আসবে ভোটের মাধ্যমে। সরকার-নির্ধারিত প্রতিনিধি নয়, প্রকৃত ব্যবসায়ীরাই ঠিক করবেন কে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বর্তমান বিধিমালায় সেটার ঘাটতি রয়েছে।”
তিনি যোগ করেন, “আমরা চেয়েছি একটি উদার, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভাজন নয়, দরকার ঐক্য। সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করছি, দেশজুড়ে আমরা একাধিক মতবিনিময় সভা ও সেমিনার করছি।”
❝এলডিসি উত্তরণ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তিশালী নেতৃত্ব জরুরি❞
নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তীর্ণ হবে। এই উত্তরণ একদিকে যেমন গৌরবের, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নানা চ্যালেঞ্জ। রপ্তানি ভর্তুকি বন্ধ হয়ে যাবে, ট্রিপস বাধ্যবাধকতা বাড়বে, বাজার প্রতিযোগিতা তীব্র হবে।
জাকির হোসেন নয়ন বলেন, “এমন এক সন্ধিক্ষণে FBCCI-এর মতো সংগঠনের নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী, দূরদর্শী ও ব্যবসায়ী-স্বার্থনির্ভর হতে হবে। আমাদের নেতাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং স্বচ্ছভাবে নির্বাচিত হতে হবে।”
❝সংগঠনের দাবি ও সুপারিশসমূহ❞
প্রেস কনফারেন্সে নেতারা সরকারের কাছে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন:
১. ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নির্বাচনে সরাসরি ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
২. সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন সরাসরি সাধারণ সদস্যদের ভোটে করতে হবে।
৩. সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে সংগঠনগুলোর স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।
৪. এলডিসি উত্তরণের পর বিশেষ সুবিধা অব্যাহত রাখতে সরকার-ব্যবসায়ী যৌথ ফোরাম গঠন করতে হবে।
❝ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা❞
বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা দেশব্যাপী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী প্যানেল গঠন করছেন। এই প্যানেলই আসন্ন FBCCI নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং একটি গণতান্ত্রিক, সমন্বিত নেতৃত্ব গঠনের লক্ষ্যে প্রচারণা চালাবে।
পরিশেষে, আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন বলেন, “আমরা FBCCI-কে ব্যবসায়ীদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেটা হবে সবার অংশগ্রহণে, অবাধ ভোটের মাধ্যমে, কোন প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই। ব্যবসায়ীদের অধিকার ও সম্মান রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব।”