এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেন্জ মোকাবেলা ও এফবিসিসিআই’র আসন্ন নির্বাচন
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৩০ এম, ২৬ মে ২০২৫

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েট হওয়ার পর বাংলাদেশ অনেক গুলো নতুন চ্যালেন্জের মুখে পড়বে। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু এলডিসি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের পর এই সুবিধাগুলো আর থাকবে না। সম্প্রতি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত ‘Expanding and Diversifying Exports in Bangladesh: Challenges and the Way Forwards’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫.৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
তাছাড়া এলডিসিভুক্ত হওয়ার কারণে ডব্লিউটিওর ‘Agreement on Trade Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS)’ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেধাস্বত্ব হিসেবে ওষুধ আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। ট্রিপস চুক্তি অনুযায়ী ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলো এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অন্যদিকে কৃষিতে ভর্তুকি সুবিধা সীমিত করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নে প্রাধিকার থাকবে না।
চ্যালেন্জ গুলোকে মোটাদাগে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি
১) বিভিন্ন দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারানো।
২) মেধাস্বত্ত্ব আইন থেকে ছাড় রহিত করণ।
৩) কৃষি,রপ্তানিসহ অন্যান্য খাতে বিভিন্ন ভর্তুকি রহিত করণ।
এসকল সমস্যা গুলো সমাধানের প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। কেননা বিভিন্ন দেশের বিশেষত ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধীকার হারালে তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। তাছাড়া রপ্তানি ভর্তুকি উঠিয়ে দিলে অনেক রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাবে। সামগ্রিক রপ্তানি খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল প্রায় ১৪.২৩%। কৃষি খাত বাংলাদেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% কর্মসংস্থান সরবরাহ করে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষি খাতের উপর থেকে ভর্তুকি উঠিয়ে নিলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ সকল চ্যালেন্জ মোকাবেলার জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এফবিসিসিআই বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ও দেশের ৪.৫ কোটি ব্যবসায়ীদের অভিভাবক হিসাবে কাজ করে। বিগত দিনের থেকে এলডিসি গ্রাজুয়েট পরবর্তী বাংলাদেশ অর্থনীতি আরো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবে। বিগত ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থপাচার ও দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ খাদের কিনারায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এবং বিভিন্ন ঋণপ্রদান কারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত ভাবে কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে, বিশেষত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বৈদেশিক দেনা ছিল প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা টাকা। এখন তা নেমে ১০ হাজার কোটি টাকায় এসেছে। অর্থাৎ দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার। এরপরেও শিল্পে গ্যাস সংকট, বৈদেশিক বিনিয়োগ,কর্মসংস্হান কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা সরকারকে চ্যালেন্জের মুখে ফেলে দিয়েছে ।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য সংগঠনের অনেক ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ( মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ) এফটিএ করা জরুরি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুঁকিতে পড়বে, বিদ্যমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে অগ্রাধিকার মূলক বাণিজ্য চুক্তি ( পিটিএ) হলেও করা জরুরি। পোশাক রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগি দেশ ভিয়েতনামের প্রায় ৪০ টির অধিক দেশের সাথে এফটিএ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের কোন দেশের সাথে এফটিএ নেই শুধু ভুটানের সাথে পিটিএ রয়েছে।
এফবিসিসিআই এর সাধারণ সদস্য তথা সন্মানিত ভোটাররা অনেক সচেতন । ব্যবসায়ী নেতৃত্বকে এমন টীম গঠন করতে হবে যেন আগামী দিনের বিশ্ববাণিজ্য ও বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেন্জ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে এবং সে সকল চ্যালেন্জ মোকাবেলা করার জন্য সরকারের সাথে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সহযোগী হিসাবে কাজ করতে পারে। কেননা এফবিসিসিআই এর সদস্যরা ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ব্যবসায়ী সমাজের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ক্ষতির মুখে পড়বে। আমাদের সকলের সততা, দায়িত্বশীলতা ও দেশপ্রেমই পারে আগামীর স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে।
লেখক: আতিকুর রহমান
আহবায়ক, মিডিয়া ও লিয়াজোঁ কমিটি
বৈষম্য বিরোধী সংষ্কার পরিষদ (এফবিসিসিআই)