জেল থেকে পালিয়েছে আবরার ফাহাদ হত্যার ফাঁসির আসামি

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি জেলখানা থেকে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবরারের ভাই ফাইয়াজ। গত ৫ আগস্টের পরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান। বিষয়টি আদালত ও বাদীপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবরার ফাইয়াজ। আবরার ফাইয়াজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে ৫ আগস্টের পরে। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজ, যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেননি তখন।’ তিনি লিখেছেন, ‘ফাঁসির আসামির তো কনডেম সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কীভাবে! পালানোর পরও এ তথ্য বাইরে না আসা তো এটাই প্রমাণ করে যে তাকে ধরতেও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। পূর্বে থেকেই আরও ৩ জন পলাতক।’ পোস্টের একেবারে শেষে আবরার ফাইয়াজ আসামির নাম ও পরিচয়ও উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মুনতাসির আল জেমি, পিতা আব্দুল মজিদ, মাতা- জোসনা বেগম। ঠিকানা ৫/১ বাউন্ডারি রোড, নতুন বাজার, কোতোয়ালি, ময়মনসিংহ।’

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমির হোসেন আমু

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর খিলগাঁও থানার হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত শুনানি শেষে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সোমবার মামলার শুনানি চলাকালে তাকে কাঠগড়ায় বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয়। পরে তিনি এই চেয়ারে বসে ২০ মিনিট শুনানি শোনেন। শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর অন্য আসামিদের শুনানি চলাকালে ১০টা ৪০ মিনিটে কাঠগড়ায় বসার জন্য আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতাকে চেয়ার দেওয়া হয়। এরপর তিনি ১১টা পর্যন্ত কাঠগড়ায় চেয়ারে বসে অন্যদের শুনানি শোনেন। এ সময় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে তার খোঁজ খবর নিতে দেখা যায়। মামলার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের বনশ্রী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মিজানুর রহমান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় গত সেপ্টেম্বরে তার বাবা কামাল হোসেন খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা করেন।

সালমান এফ রহমানের ৩৫৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য ও তার সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন এ আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ অন্যদের নামে ব্যাংক হিসাবগুলোর তথ্য পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তারা এসব ব্যাংক হিসাব হস্তান্তর, স্থানান্তর বা রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন। এতে সফল হলে, অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের, আদালতে চার্জশিট দাখিল, আদালতের বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় হতে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য এবং তার সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।

স্ত্রীসহ নিক্সন চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, নিক্সন চৌধুরী এবং তারিন হোসেন গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। তদন্তকাজ চলমান থাকা অবস্থায় তারা দেশত্যাগ করলে সার্বিক তদন্তকাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মাণ হয়। এমতাবস্থায় তদন্ত কাজ চলমান থাকা অবস্থায় যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর একই আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছিলেন। নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের ব্যাংক হিসাবে তিন হাজার ১৬২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন এবং প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ৯ জানুয়ারি পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।

চ্যানেল ওয়ান সম্প্রচারে বাধা নেই : আপিল বিভাগ

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ান সম্প্রচার বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে চ্যানেল ওয়ান সম্প্রচারে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। আদালতে চ্যানেল ওয়ানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি দীর্ঘ ১৬ বছর পর আপিল দায়েরের অনুমতি পায় চ্যানেল ওয়ান। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে চ্যানেল ওয়ানের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, পলাশ চন্দ্র রায়, কাজী আখতার হোসেন, মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, ব্যারিস্টার মারুফ ইব্রাহিম আকাশ এবং মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ। দেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ওয়ান’ ১৬ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার কিছু পর তৎকালীন সরকার ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ বন্ধ করে দেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক এবং প্রতিহিংসাবশত শেখ হাসিনা বিটিআরসিকে বাধ্য করে জনপ্রিয় এই গণমাধ্যমটির সম্প্রচারে হস্তক্ষেপ করেন। পরে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করেন চ্যানেল ওয়ান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরাসরি তৎকালীন সরকারের অন্যায় নির্দেশে মামলার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। চ্যানেল ওয়ান এর লিগ্যাল অফিসার মিজান-উল হক বলেছেন, ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আবারও মামলা নিয়ে আদালতে গেলে চেম্বার জজ আপিল করার অনুমতি দেন। আদালতের এমন আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চ্যানেল ওয়ানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। বলেন, অন্যায়ভাবে চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আজ আদালত ন্যায় বিচার করেছেন।

হাসপাতালে গিয়ে ‘নো ট্রিটমেন্ট’ ‘নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা: চিফ প্রসিকিউটর

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা অপকর্মের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এবার জানা গেল, পতনের কয়েক দিন আগে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে গিয়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। যার প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে এবং তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম এই তথ্য জানান। আজ আদালতে পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন তাজুল ইসলাম। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমরা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে যখন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম তখন সেখানে চিকিৎসারত আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা আমাদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে একবার হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’। অর্থাৎ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের কোনো চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে এখান থেকে বাইরে না যেতে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।’ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলির কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদের জানিয়েছেন। এর তথ্য প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।’সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আমাদের যেসব সন্তান শহীদ হয়েছেন, তাদের মৃতদেহ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেওয়া হয়নি, কাউকে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর যারা সেখানেই শহীদ হয়েছেন, তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা গেছে- এই কথাটিও লিখতে দেওয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট কিংবা জ্বরে মারা গেছে- এ ধরনের কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্দোলনে শহীদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা-আক্রমণ করেছে।’ চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, যে শহীদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই। আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে, সেই মুহূর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দ্রুত শহীদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে কী ধরনের নিষ্ঠুরতার সাথে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্মমতার প্রমাণগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিক করার পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলার প্রমাণের সাথে সম্পৃক্ত করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তাজুল ইসলাম।

জামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি মঙ্গলবার

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেন। আদালতে বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আজহার ইসলামের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন। মো. আসাদুজ্জামান আপিল বিভাগে বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। কিন্তু ওই দিন শুনানি হয়নি। রিভিউ আবেদনটি শুনানি হওয়া প্রয়োজন। আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।’ এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চে এক বিচারপতি না থাকায় আদালত শুনানির দিন পিছিয়ে দেন। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তখনকার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শতশত বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। যদিও এটি প্রহসনের রায় বলে আখ্যায়িত করে আসছে জামায়াতে ইসলামী। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ২ হাজার ৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়।

খালেদা জিয়াকে খালাসের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি ২ মার্চ

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের দণ্ড থেকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২ মার্চ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ। অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের দণ্ড থেকে খালাস দেন হাইকোর্ট। সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন,ব্যারিস্টার কায়সার কামাল,ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন খোকন, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন। গত বছরের ২০ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়। গত ৩ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক নিজ খরচে তৈরির অনুমতি দেন হাইকোর্ট। পরে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়া কোনো অনুকম্পা চান না। তিনি আইনিভাবে মামলা নিষ্পত্তি করতে চান। একারণে আমরা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল শুনানি করতে চাই। আপিল শুনানির জন্য আদালত আমাদের নিজ খরচ পেপারবুক প্রস্তুত করার অনুমতি দিয়েছেন। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্য তিন আসামিকেও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। খালেদা জিয়াসহ প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলে ৪২ কাঠা জমি বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া।’

বিচারকদের জামিন দেয়ার একচ্ছত্র অধিকার নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিচারকদের উদ্দেশে বলেছেন, জামিন দেয়ার একচ্ছত্র অধিকার আপনাদের নেই। ৫ আগস্টের আগের তত্ত্বে বিচার কার্যক্রম চালানো যাবে না। নতুন বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যশোরে অনুষ্ঠিত দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। যশোর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে যশোর পিটিআই মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে কাদের পক্ষে দাঁড়াবেন। জেন-জিরা যে ইতিহাস তৈরি করেছে আগামী একশ’ বছরেও ম্লান হবে না। তিনি বলেন, এ রাষ্ট্র ট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে সবাইকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে কোন ব্যক্তির কাছে নয়, আপনারা আইন, সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। তিনি আরো বলেন, অনেক চক্রান্ত চলছে। প্রতিবিপ্লব শক্ত হাতে দমন না করলে এ রাষ্ট্র ধরে রাখতে পারবো না। আমরা যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদের ধরতে হবে। কর্মশালায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, সিআইডির অতিরিক্ত আইজি মতিউর রহমান শেখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান খান বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও ১৬ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার, জেলা ও দায়রা জজ, সিনিয়র জুডিশিয়াল ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পাবলিক প্রসিকিউটর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ওসিসহ ৩২০ জন অংশ নেন।

গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রীকে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণের প্রমাণ পেয়েছে ট্রাইব্যুনাল

পুলিশের সাবেক এডিশনাল এসপি এবং র‍্যাবের সাবেক কোম্পানি কমান্ডার আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গুম করা ব্যক্তির স্ত্রীকে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণের তথ‍্য প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তাজুল ইসলাম বলেন, আজ ট্রাইব্যুনালে ৩য় পিটিশন ছিল পুলিশের সাবেক এডিশনাল এসপি এবং র‍্যাবের সাবেক কোম্পানি কমান্ডার আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে মারাত্মক। তিনি অসংখ্য মানুষকে গুম ও নির্যাতন করার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, অনেককে এই আলেপ উদ্দিন গুম করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল। তাদের নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করেছিল। বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, চোখ বেঁধে রাখা, উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে এই আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ হলো- এই আলেপ উদ্দিন একজন আসামিকে গুম করে রাখার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে (স্বামীকে হত্যার) রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। এমন তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা বিষয়গুলো ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছি। এমন নিষ্ঠুরতম অপরাধীর অপরাধের তদন্ত করতে সময় লাগবে, কারণ প্রতিদিনই ভিকটিমরা আমাদের কাছে নতুন নতুন অনেক অভিযোগ নিয়ে আসছেন। এসব তদন্ত শেষ হলে তাদের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া যেন শুরু করা যায় সে জন্য আমাদের তদন্ত সংস্থা দিন-রাত কাজ করছে।

চিড়া মুড়ি খাওয়ারও টাকা নাই: পলক

কারাগারে অর্থ সংকটের কথা জানালেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‌‘চিড়া মুড়ি খাওয়ারও টাকা নাই। কারাগারে সুমন ভাইয়ের (ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন) সঙ্গে রুটি কলা ভাগ করে খাই।’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন নিয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাঁকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় সেখানে তিনি এ কথা বলেন। হেলমেট, হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে আনা হয়। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে পলক বলেন, ‘জেলখানার জীবন মারাত্মক শিক্ষার জীবন। সবার কম করে হলেও সাত দিন জেলে থাকা উচিত। যদি কখনও কারাগার থেকে বের হতে পারি তখনও এই কথা বলব।’ এ সময় পুলিশ তাকে কথা বলতে নিষেধ করলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বেআইনি কথা বলছি না।’ কথা বললেই রিমান্ড বাড়িয়ে দেয়: আদালতে কথা বললে রিমান্ড বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন পলক। তিনি বলেন, ‘কথা বললেই রিমান্ড বাড়িয়ে দেয়। আইনজীবীরা কথা বললে রিমান্ড বেড়ে যায়।’ মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে সালাম দেন পলক। তবে প্রথমে সাড়া না দিলেও পরবর্তীতে পিপি তার সালামের উত্তর দেন। এতে পলক বলেন, ‘যাক এইবার পিপি স্যারের মন নরম হয়েছে।’ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের নিয়ে লেখার সময় আপনারা একটু সদয় হবেন।’ মামলার শুনানি শেষে পলককে ধানমন্ডি থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম। পরে তাঁকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আমার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, মৃত্যুটা যেন ঈমানের সঙ্গে হয়: জেড আই খান পান্না

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোর থেকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। চলমান সেই গুজবের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি বলেন, আমি ভালো আছি, আমার মৃত্যুটা যেন ঈমানের সঙ্গে হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে আসেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। এদিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত সব আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। আদালতকে তিনি বলেন, আজ সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে আমার ‘বিদেহী আত্মার’ মাগফিরাত কামনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ভালো আছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালো থাকবো। আমার মৃত্যুটা যেন ঈমানের সঙ্গে হয়।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। গত ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। ওই আন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শাজাহান খান ও আমুর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে জেড আই খান পান্না

ট্রাইব্যুনালে আইনি লড়াই করতে আগ্রহী বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর পক্ষে আইনি লড়াই করতে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। সোমবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসেছেন জেড আই খান পান্না। এ সময় তিনি অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে যান। এ ছাড়াও তিনি প্রসিকিউশনের সদস্য মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান আমি সুস্থ আছি। এর আগে, গত ২১ নভেম্বর সুযোগ পেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে আইনি লড়াই করতে চান বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না। গত ২১ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। আইনজীবী পান্না বলেন, সুযোগ হলে আমি শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়াবো। গণহারে মামলার সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি সবসময় নিপীড়িতের পক্ষে আছি। সে যেই হোক না কেন। যদি সুযোগ হয় আমি শেখ হাসিনার পক্ষে লড়াই করবো, সেটা ট্রাইব্যুনাল হোক আর অন্য যেকোনো জায়গায় হোক।

চট্টগ্রামের সাবেক এমপি ফজলে করিম কারাগারে

জুলাই আন্দোলনে সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য এ আদেশ দেন। আসামির বিরুদ্ধে আগামী ৮ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে ট্রাইব্যুনাল। এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত এই আসামি ছাত্রদের বিষয়ে ইন্ধন জুগিয়েছে। চট্টগ্রামের এই আন্দোলন দমনে ফজলে করিমের নিজস্ব সংসদীয় এলাকা রাউজান থেকে অস্ত্র ও সন্ত্রাসী বাহিনী সরবরাহ করেছে। ১৬ জুলাই শহীদ ওয়াসিম আকরাম ও ফয়সাল হত্যার ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলো। যার প্রেক্ষিতে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর এমএইচ তামিম আরো বলেন, সরকার ও জনগণের ইচ্ছা নয় ন্যায় বিচারের স্বার্থে যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। শুনানিতে আসামি ফজলে করিম আদালতে বলেন, তিনি শহরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তখন আদালত তাকে বলেন, তার পক্ষে আইনজীবী এসব অভিযোগ খণ্ডন করতে পারবেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অকাট্য দলিল হিসেবে কাজে লাগবে

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সাক্ষ্য হিসেবে আসবে। এটি অকাট্য দলিল হিসেবে ব্যবহার করবে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার কার্যালয়ের তিনি এমন মন্তব্য করেন। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্তদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। শুধু মৃত্যুদন্ডের বিধানটি ছাড়া গুম নিয়ে জাতিসংঘের সুপারিশ ট্রাইব্যুনাল আগেই বাস্তবায়ন করেছে বলে জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৮৪৮ জন শহীদের তালিকা জমা দিল বিএনপি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছে বিএনপি। সেখানে আন্দোলনে দলটির ৮৪৮ জনের শহীদ হওয়ার তালিকা দিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগটি দায়ের করেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিএনপির মামলা ও সমন্বয় প্রধান সালাহ উদ্দিন খান। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়। তালিকাসহ অডিও ভিডিও ও ৮৪টি মামলার এজাহারের কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন করে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করে। সেখানে ৮৪৮ জনের শহীদের তালিকা জমা দেয় বিএনপি। একইসঙ্গে দেশব্যাপী হওয়া মামলার এজাহার, পত্রিকার ছবি, অডিও ভিডিও জমা দেওয়া হয়েছে। তারা হত্যার সঠিক বিচার, ন্যায়বিচার দাবি করেন তারা।

অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছা দিয়ে গঠিত: হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত ও বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা গঠিত বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট খারিজের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহসীন রশিদ। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ আজ প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনও আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত নয় বলে রিট আবেদনকারীর (আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ) বক্তব্যে এসেছে। উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক অনন্য পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেন। মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত। পূর্ণাঙ্গ আদেশে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসের অংশ এবং আশা করি, আগামী বহু বছর ধরে জনগণ যত্নে থাকবে। রিটটি ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক উল্লেখ করে তা সরাসরি খারিজ করা হয়।

বেনজিরকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। আদালত সূত্র জানিয়েছে, মূলত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিচালক হাফিজুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। . ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে চার মামলা করে দুদক। মামলায় বেনজীর পরিবারের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে একটি সূত্রের দাবি, বেনজীর পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। এরপর ১৮ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের এক সভায় অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। পরে অনুসন্ধানে বেনজীর ও তার পরিবারের নামে ৬৯৭ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বিও হিসাব খুঁজে পেয়ে আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করে দুদক। বেনজীরের বিরুদ্ধে এপ্রিলে অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি দেশত্যাগ করেন। এরই মধ্যে ২৮ মে তাদের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফায় তলব করলেও তারা দুদকে আসেননি। আর গত ২ জুলাই বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠিয়েছিল দুদক। এ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আগস্টের মাঝামাঝি আইনজীবীর মাধ্যমে পুলিশের সাবেক প্রধান তার পরিবারের চার সদস্যের সম্পদ বিবরণী জমা দেন। এর আগে গত বছরের ২৩ মে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন। সবমিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীরও ছিলেন বলে জানা গেছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান।

আমি বিএনপি করতাম, আদালতে শমসের মবিন

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীকে চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সিএমএম আদালতে তাদেরকে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী থানার পারভেজ মিয়া হত্যা মামলার আসামি শমসের মবিন চৌধুরী দাবি করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের দিন বাসায় ছিলেন। আদালতের কাছে নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় তুলে ধরেন তিনি। শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কোনো খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমি তো প্রমাণ করে দিতে পারব ৫ আগস্ট আমি বাসায় ছিলাম। আমাকে রিমান্ডে দেওয়ার আবেদন নাকচ করা হোক।’ একপর্যায়ে শমসের মবিন চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘আমি তো ১৫ বছর বিএনপির রাজনীতি করেছি মাননীয় আদালত।’ শমসের মবিন চৌধুরীর এ বক্তব্যের পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী তার রিমান্ডের যুক্তি তুলে ধরে বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী পলটিবাজ নেতা। তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী। জুলাই–আগস্টে গণহত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের একজন হলেন শমসের মবিন চৌধুরী। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরীকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীকে গত বছরের ১৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ২০১৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন তিনি। সবশেষ ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন হন তিনি। তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নাজমুল হুদা। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

৭৮ দিনের রিমান্ডে সাবেক আইজিপি মামুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পথচারী মো. মাসুদুর রহমান জনি হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে বিভিন্ন থানার মামলায় মোট ৭৮ দিন রিমান্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারী) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইশতিয়াক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে মাসুদুর রহমান জনি হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক সিকদার মহিতুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি শুনানি করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে আদালতে বলেন, উনাকে এ পর্যন্ত ৭৫ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উনি যা যা বলার সব বলেছেন। আর রিমান্ডের প্রয়োজন নেই।’ শুনানি শেষে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কয়েকটি দফা রিমান্ড শেষে পুনরায় রিমান্ডে পাঠায় আদালত। মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট দুপুরে মো. মাসুদুর রহমান জনি (৪০) কর্মস্থল থেকে নিজ বাড়ি ডেমরায় ফেরার পথে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন চৌরাস্তা থানার সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুলিতে আহত হন। পরে তাকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। কয়েক দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১২ আগস্ট ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটা হত্যা মামলা করা হয়।

আবরার হত্যা: হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার মামলায় দণ্ডিত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। এর আগে গত ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে শুনানি হয়। ওই দিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিম সরকার। তিনি মামলার পেপারবুক থেকে এজাহার, অভিযোগপত্র, জবানবন্দি ও রায়ের অংশবিশেষ উপস্থাপন করেন। এরপর বিচারিক আদালতের রায় ও যুক্তিতর্ক তুলে ধরে শুনানি হবে। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিম সরকার ও রাসেল আহমেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাবনী আক্তার। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী। ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড‍ দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। এছাড়া এ মামলার রায় অনুযায়ী আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। পরে কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন। পাশাপাশি অনেকে ফৌজদারি আপিলও করেন। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১’-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ওই রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম অরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ অরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (২০), এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম (২০) (পলাতক), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান (২২) (পলাতক), মুজতবা রাফিদ (২১) (পলাতক)। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩) ও মো. মোয়াজ অরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা (২১)। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

জাহিদ মালেক ও নাইমুল ইসলামসহ ৬ জনের আয়কর নথি জব্দ

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক ও তার ছেলে রাহাত মালেক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, তার স্ত্রী নাসিমা খান মন্টিসহ ছয়জনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন। রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক ছয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আয়কর নথি জব্দ হওয়া অন্যরা হলেন- কোয়ালিটি মিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম এবং সাবেক কানুগগো আবুল হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় তাদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়।

এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে উপকারি পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান এ আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, এস এম পারভেজ তমাল এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান পদে থেকে অন্যান্যদের সাথে যোগসাজশে শেয়ার বাজার কারসাজি ও অন্যান্য অপরাধের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন ও মানি লন্ডারিং করেছেন। তার দেশত্যাগের প্রচেষ্টার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন।