এক বছরে বিচার বিভাগে অনেক অর্জন দেখছেন প্রধান বিচারপতি


এক বছরে বিচার বিভাগে অনেক অর্জন দেখছেন প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগে গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ। তিনি বলেন, সম্প্রতি জুডিশিয়াল পদায়ন ও গঠন বিধিমালার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিচার বিভাগকে বড় ধরনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে সিলেটের একটি হোটেলে বাণিজ্যিক আদালত গঠন বিষয়ক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই অনেকটা এগিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। গত জুলাইয়ে বিডা, ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে আইনজীবী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত সংলাপে ইতিবাচক অগ্রগতি পাওয়া গেছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “এসব প্রস্তাবকে এজেন্ডা হিসেবে ধরে কাজ চলছে। খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সরকারকে হস্তান্তর করা হবে এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের ওপর।”

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আলাদা কোনো বিচারিক ফোরাম নেই। ফলে কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধও সাধারণ দেওয়ানি মামলার মতো একইভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় আটকে যাচ্ছে, যা মামলার জট বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শুধু অর্থ ঋণ আদালতেই ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার মামলা অমীমাংসিত রয়েছে বলে তিনি জানান।

ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ বলেন, পৃথক বাণিজ্যিক আদালতের দাবি বহুদিনের। বড় বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—দেশি-বিদেশি সবাই দীর্ঘদিন ধরেই এ দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্যও দিকনির্দেশক হতে পারে।

প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালতের সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। এর মধ্যে রয়েছে—একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও ধাপভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তি ব্যবহার (ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং ও হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ।

তিনি আরও জানান, আদালত প্রতিষ্ঠার পর বিচারকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, মিশ্র আইনব্যবস্থার সুবিধা কাজে লাগানো হবে এবং বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। তার ভাষায়, “এটি শুধু একটি নতুন আদালত নয়; বরং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য নতুন ভিত্তি।”

সেমিনারের মূল পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি নিজে। সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×