‘গরিবের ছেলে টাকার লোভ সামলাতে পারিনি’, আদালতে চাঁদাবাজ রিয়াদ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৯:২২ এম, ০৪ আগস্ট ২০২৫

ঢাকার গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার (৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালতে তিনি স্বেচ্ছায় এই জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে রিয়াদ জানান, চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত ১০ লাখ টাকা তিনি ও তার সহযোগী জানে আলম অপু সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি গরিবের ছেলে, তাই টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।”
জবানবন্দিতে তিনি জানান, ঘটনার দিন সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাড়িতে কারা গিয়েছিলেন এবং কী উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। রিয়াদ আদালতে বলেন, প্রথমে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে শাম্মী আহম্মেদকে ধরতে গিয়ে তাকে বাসায় না পেয়ে পরে পানি খাওয়ার কথা বলে তিনি ও অপু বাড়িতে প্রবেশ করেন। এরপর তারা হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন এবং পরবর্তীতে সেই অর্থ ভাগাভাগি করে নেন।
রোববার রিমান্ড শেষে রিয়াদসহ চারজনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। রিয়াদ তখন স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
জবানবন্দিতে রিয়াদ আরও বলেন, তিনি অতীতে বিভিন্ন সময় ‘ফ্যাসিবাদী লোকজন’ গ্রেপ্তারে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। ঘটনার দিন, ১৭ জুলাই রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জু গুলশান জোনের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে রিয়াদ ডিসিকে জানান, শাম্মী আহম্মেদ গুলশানের নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। ডিসি তখন বিষয়টি গুলশান থানার ওসিকে জানান। রাত ২টার দিকে রিয়াদ, মঞ্জু, অপু, সাবাব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার, সাদাকাউম সিয়াম, তানিম ওয়াহিদ এবং আরও কয়েকজন থানায় যান। ওসি তাদের জানান, এত রাতে অভিযান চালানো যাবে না, ফজরের আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পরে পুলিশের একটি দল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। অভিযান পরিচালনা করেন গুলশান থানার তদন্ত কর্মকর্তা। তারা শাম্মীর বাসায় গেলেও তাকে পাননি এবং সকাল সাড়ে ৭টায় ফিরে আসেন। এরপর জানে আলম অপু রিয়াদকে জানান, তিনি বাসা থেকে শাম্মীর একটি এয়ারপড নিয়ে এসেছেন। এয়ারপড ফেরত দেওয়ার জন্য ওইদিন সকাল ১০টার দিকে তারা ফের শাম্মীর বাসায় যান। পানি খাওয়ার কথা বলে অপু ঘরে ঢুকে শাম্মীর স্বামীকে বলেন, শাম্মী বাসায় আছেন, তাকে পুলিশে দেওয়া হবে। এতে ভীত হয়ে শাম্মীর স্বামী টাকা দিতে রাজি হন। অপু প্রথমে ৫০ লাখ টাকা দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা নিয়ে তারা চলে যান।
রিয়াদ বলেন, ২৫ জুলাই তারা বাকি ৪০ লাখ টাকা নিতে আবার শাম্মীর বাসায় যান। এ সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে রিয়াদসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। অপু পালিয়ে যায়।
জবানবন্দির শেষে আদালত রিয়াদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এছাড়া আলোচিত মামলার আরও তিন আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান। তারা হলেন—মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। এই তিনজনও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় তারা সবাই সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।
সূত্র: যুগান্তর