আদালত অবমাননার অভিযোগে ডিসি তারেক জুবায়েরকে শোকজ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:৪৬ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে বিচারিক শুনানির সময় আদালতের কাজে অসহযোগিতা এবং আদালত অবমাননার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) তারেক জুবায়েরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) ইস্যু করেছেন আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ এই আদেশ দেন। ডিসিকে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে লিখিতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ২৪ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় শুনানির দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ডিসি তারেক জুবায়ের মোবাইল ফোনে বিচারকের সঙ্গে কথা বলেন এবং আসামিকে আদালতের নিচে প্রিজনভ্যানে রেখে শুনানি করতে অনুরোধ জানান। তবে বিচারক এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন আদালতের মর্যাদা ও বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখার স্বার্থে।
পরে রাত ৭টা ১৪ মিনিটে আসামিকে আদালতে হাজির করতে দেরি হওয়ায় বিচারক ডিসিকে ফোন করে জানতে চান, কত সময় লাগতে পারে। জবাবে ডিসি জানান, তিনি সময় নির্ধারণ করে বলতে পারবেন না। বিচারক যখন অন্তত অনুমানভিত্তিক একটি সময় জানানোর অনুরোধ করেন, তখন ডিসি তা জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে আগ্রহী নন। এমনকি বিচারককে ডিএমপির আইন উপদেষ্টা বা কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
আদেশে বিচারক বলেন, “ডিসি তারেক জুবায়ের বিচারিক কার্যক্রমের অধীনে থাকা সত্ত্বেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান, যা স্পষ্টতই দম্ভ ও কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার শামিল।”
আদালত আরও মন্তব্য করে, এই ধরনের আচরণ পুলিশ প্রবিধান ও প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৭৬, ১৭৯ এবং ২২৮ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিচারক যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারার অধীনে 'এক্স-অফিসিও জাস্টিস অব পিস', তাই তার প্রশ্নের জবাবে অসহযোগিতা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে ডিসিকে শোকজ করে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হবে না। তার লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এই বিষয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও ডিসি (প্রসিকিউশন) তারেক জুবায়েরকে পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গত শনিবার থেকে আমি ছুটিতে আছি।”
উল্লেখ্য, ২৪ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনের সময় যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যার মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।