বেনজীরের গুলশান ফ্ল্যাটের বিলাসবহুল জিনিসপত্র উঠছে নিলামে
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৪৬ পিএম, ২১ জুলাই ২০২৫

শত শত পোশাক ও ব্যবহৃত মূল্যবান সামগ্রীসহ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের গুলশানস্থ অভিজাত ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে থাকা তার পরিবারের ব্যক্তিগত সামগ্রী নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত। ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত এই উদ্দেশ্যে একটি নিলাম কমিটি গঠন করেছে, যা নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে প্রকাশ করবে।
গত ২১ জুলাই সোমবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নিলাম কমিটি জানায়, তারা পুরো প্রক্রিয়ার ধরন ও মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে এবং নিলামের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলমান অবস্থায় তার গুলশানের র্যান্কন টাওয়ারে অবস্থিত চারটি আধুনিক ফ্ল্যাট নিয়ে তৈরি করা ডুপ্লেক্স ইউনিটের ব্যবহৃত সামগ্রী নিলামে তোলা হচ্ছে।
কমিটির এক সদস্য বলেন, "ফ্ল্যাটের ব্যবহৃত জিনিসপত্র তালিকা করার সময় মনে হয়েছে আমরা মার্কোস ও ইমেলদা মার্কোসের সম্পদের তালিকা তৈরি করছি। আশির দশকে দুনিয়া কাঁপানো মার্কোস দম্পতির কথা মনে পড়ে গেলো। ইমেলদা মার্কেটের জুতা, ব্যবহৃত পোশাক, অন্যান্য সামগ্রী ও প্রসাধনের মুখরোচক সংবাদ ওই সময় আলোচিত ছিল। এ যেন বেনজীর দম্পতির সঙ্গে ফিলিপাইনের মার্কোস দম্পতির রাশি জাতকের মিল।"
তালিকায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ পরিমাণে ব্যক্তিগত সামগ্রীর বিবরণ। উদাহরণস্বরূপ, সেখানে পাওয়া গেছে—১২২টি শার্ট, ২৬৬টি প্যান্ট, ৩০টি ব্লেজার, আটটি স্যুট, ৭২২টি টি-শার্ট, ২২৪টি পাঞ্জাবি, ৪৭টি পায়জামা, ৮৮ জোড়া স্যান্ডেল, ৩৫ জোড়া কেডস, ৩৮ জোড়া জুতা, ৪৯৪টি শাড়ি, ২৫০ সেট থ্রিপিস, ৪৯৬টি সালোয়ার-কামিজ, ৬৫টি ব্লাউজ, ২১২টি জামা, ৫৬টি জ্যাকেট, ১০৯টি বেডশিট, ৭৫টি লেডিস ভ্যানিটি ব্যাগ, ৬২২টি টপস, ১১টি পুরুষদের সোয়েটার, ৩৪টি লেডিস সোয়েটার, ৩৫৫টি লেডিস প্যান্ট, ২৮টি লেডিস টি-শার্ট, ৫৮টি নাইট ড্রেস, ৩৪৭টি ওড়না, ৮৯টি শাল-চাদর, ১৩২টি শীতের জামা, ১৬টি লেহেঙ্গা, ৩৪টি সানগ্লাস এবং ৬৭টি ট্রাউজার।
এছাড়াও নথিভুক্ত করা হয়েছে ড্রয়িং রুম, থিয়েটার রুম, কিচেন, মাস্টার বেডসহ বিভিন্ন কক্ষের ব্যবহৃত আসবাব ও প্রসাধনী সামগ্রী। উল্লেখযোগ্য যে, ফ্ল্যাটের মোট ১৯টি ফ্রিজ এবং ১০০ টনের সমান এসি ইউনিট রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে সুইমিং পুল ও আধুনিক ইলেকট্রনিক সামগ্রী।
তবে কিছু মূল্যবান আসবাব—যেমন খাট, ডাইনিং টেবিল, সোফা, চেয়ার, আলমারি ও ওয়্যারড্রোব—বর্তমানে নিলামের বাইরে রাখা হয়েছে। এসব সামগ্রীর বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেনজীর দম্পতি গুলশানের র্যান্কন টাওয়ারের ১২/এ, ১২/বি, ১৩/এ, ১৩/বি নম্বর ফ্ল্যাট একত্রিত করে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স তৈরি করেন, যেখানে রয়েছে সুইমিং পুল, অতিথি লাউঞ্জ, থিয়েটার রুমসহ আধুনিক জীবনযাত্রার সব আয়োজন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ২০২৪ সালের ৪ মে গোপনে দেশত্যাগ করেন। তদন্তকারীরা জানান, দেশ ছাড়ার সময় তার পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে করে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা বহন করে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় দুদক ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।
আদালতের নির্দেশনায় গঠিত নিলাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত আছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক (সভাপতি), একজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, বস্ত্র অধিদপ্তর ও ইস্পাত প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা। সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক (সম্পদ ব্যবস্থাপনা)। কমিটি ইতোমধ্যে সম্পদের ইনভেন্টরি প্রস্তুত করেছে।
২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেনজীর বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে বারবার আলোচনায় ছিলেন।
দুদক আরও জানিয়েছে, শুধু বেনজীর নয়, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা এবং দুই কন্যা ফারহীন রিশতা ও তাহসীন রাইসার বিরুদ্ধেও পৃথক চারটি মামলা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—বেনজীরের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ। স্ত্রী জিশান মীর্জার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগ। বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা ও ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসার বিরুদ্ধেও রয়েছে যথাক্রমে ৮ কোটি ৭৫ লাখ এবং ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা।