বিচারককে হেনস্তা, বিএনপিপন্থি ৪ আইনজীবীকে শোকজ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৪:৪৮ পিএম, ১৮ মে ২০২৫

আসামির জামিন শুনানিতে বিচারকের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করার অভিযোগে বিএনপিপন্থি চারজন আইনজীবীকে কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বারের এই চার আইনজীবীকে নোটিশ পাঠিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি।
রোববার (১৮ মে) বিষয়টি ঢাকা মেইলকে নিশ্চিত করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মাকসুদুল্লাহ।
এর আগে শনিবার (১৭ মে) হত্যাচেষ্টা মামলায় এক আসামির জামিন না মেলায় আদালতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিচারকের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী প্রকাশ্যে আদালতের পরিবেশ বিঘ্নিত করেন, এমনকি একজন বিচারককে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে গালাগালও করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এদিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ঘটনাটি ঘটে। কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি হানিফ মেম্বার জামিন চেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আবেদন করেন। আদালত সেটি নামঞ্জুর করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জামিন না পাওয়ায় আইনজীবী খোরশেদ আলম ও আরও কয়েকজন প্রকাশ্যে বিচারকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা বিচারককে উদ্দেশ্য করে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’, ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ ইত্যাদি মন্তব্য করেন এবং আদালতের কাজের তালিকা (কজলিস্ট) ছুড়ে ফেলেন।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, খোরশেদ আলম বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান সব এক, শুধু বাদী আলাদা—এটা কি সম্ভব?’ এরপর তিনি এজলাস ছেড়ে চলে যান।
এ সময় আরেক আইনজীবী আব্দুল খালেক মিলন বলেন, ‘আমরা সিএমএম কোর্টে রাজনীতি করেছি। আজ শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে আমরা হয়তো খুন হয়ে যেতাম।’ তিনি বিচারককে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘আপনি যে চেয়ারে বসে আছেন, সেটা আমাদের কারণে।’
আদালতের নথি অনুযায়ী, গত ৬ মে বাদী ফজলুল হক একটি অভিযোগ দাখিল করেন, যাতে হানিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে জমি দখল, লুটপাট, যৌন নিপীড়ন এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
বাদীর ভাষ্যমতে, হানিফ দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে ইউপি সদস্যের মতো আচরণ করছেন, যদিও তিনি নির্বাচিত নন। মামলায় উল্লেখ রয়েছে, একসময় নদীতে নৌকা বাইচে অংশ নেওয়া হানিফ বর্তমানে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক এবং দখলবাজি, গ্যাস সংযোগে অনিয়মসহ নানা অপরাধে যুক্ত।
এদিকে আদালতের কার্যক্রম চলাকালে বিচারককে হুমকি ও অশালীন ভাষায় আক্রমণের ঘটনায় বিচার বিভাগে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ধরনের আচরণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি গুরুতর অবমাননা এবং আইনের চোখে ফৌজদারি অপরাধের শামিল।
বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট মহল থেকে অভিযুক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। তারা বলছেন, আদালতের সম্মান রক্ষা ও বিচারককে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা বিচারব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।