বুঝলাম না, আমি কোন পক্ষের লোক: আদালতে তুরিন আফরোজ


MARCH NAEEM 2ND/-dcsuchfc.jpg

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়ালেও তিনি নিজেই নিজের পক্ষে শুনানি করেন। আদালতে তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, আমি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করলাম— আবার তার আমলেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ৬ বছর ধরে চাকরি থেকে বঞ্চিত। বুঝলাম না আমি কোন পক্ষের লোক।’

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন দুপুর ১টার দিকে তুরিন আফরোজকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর ২টা ৩০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করার উদ্দেশ্যে হাজতখানা থেকে হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হাত কড়া পরানো হয়। ২টা ৪০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। কিছুক্ষণ পর বিচারক আসেন। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আব্দুল জব্বার নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কর্মকর্তা সুমন মিয়া আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে রাষ্ট্র পক্ষের প্রসিকিউটর বলেন, ‘তুরিন আফরোজ বাংলাদেশে আলোচিত ও ঘৃণীত একজন মানুষ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে তাকে তুমুল বক্তব্য রাখতে আমরা দেখেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজম কায়েম করতে যারা সহযোগির ভূমিকা এবং সুপ্রিম কোর্টকে হাসিনার কলোনিতে পরিণত করার জন্য যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অন্যতম তুরিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে একটা ন্যাক্করজনক ঘটনা আমরা দেখেছি। সেখানে তিনি আসামিদের পক্ষে সুবিধা দেওয়ার জন্য টাকা গ্রহণ করেন। যার কারণে তাকে পাবলিক প্রসিকিউটর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের আইন সমাজের ওপর সাধারণ মানুষের যে আস্থা, সেটি নষ্ট করেছেন তুরিন আফরোজ। তার বিরুদ্ধে নীলফামারীর জলঢাকায়ও মামলা আছে। ৫ আগস্টের পর কিছু মানুষ পুনরায় দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। যে আসামিদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, তাদের মধ্যে তুরিন আফরোজ রয়েছেন। ’

এদিন তুরিন আফরোজের পক্ষে শুনানি করতে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন। তবে তুরিন আফরোজ জানান, তার আইনজীবী আছে। তখন বিচারক জানতে চান, কে আপনার আইনজীবী। তুরিন আফরোজ বলেন, ‘সাইফুল করিম।’ তবে তখন তাকে খুঁজে পাননি তুরিন আফরোজ।

তখন তুরিন আফরোজ বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি আপনার অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চাই। আদালত তাকে অনুমতি দেন। তখন বিচারককে উদ্দেশ করে তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমি দুই, তিন, পাঁচ মিনিট, কতটুকু সময়ে শেষ করবো বললে ভালো হয়। বিচারক বলেন, বলেন আপনি।’

তখন তুরিন আফরোজ বলেন, ‘৪ আগস্ট আমার বিরুদ্ধে নীলফামারীতে মামলা। পরদিন ৫ আগস্ট ঢাকায় মামলা।’

তখন আদালত বলেন, ‘ঢাকায় মামলা হয়েছে ২৭ মার্চ। ঘটনা ৫ আগস্টের। নীলফামারীর তথ্য এখানে নেই।’

তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আচ্ছা, যাই হোক।’ আমার লার্নেড ফ্রেন্ড (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) সাংঘর্ষিক কথা বলেছেন। নীলফামারীতে ৪ আগস্ট এবং ঢাকায় ৫ আগস্টের ঘটনায় মামলা। মামলাগুলো ফেব্রিকেটেড। ৫ আগস্টের আগে পুরো সময় কোথায় ছিলাম সব ডকুমেন্ট দিতে পারবো। এসময় আমার টিউমারের অপারেশন হয়।’

তুরিন আফরোজ বলেন, ‘গত চার বছর আমি মিডিয়াতে কিছু বলিনি, কিছু লিখিনি। বলা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করলাম— আবার তার আমলেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ৬ বছর ধরে চাকরি থেকে বঞ্চিত। বুঝলাম না আমি কোন পক্ষের লোক।’

তিনি বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি আস্থাশীল। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। আপনি ২০ দিন দিলেও দিয়ে দেন। কারণ আমি জানি, আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমি ন্যায়বিচার পাবো।’

পরে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×