চট্টগ্রামে ছাত্রদলকর্মীকে গুলি করে হত্যার মামলায় যুবদলের ৮ কর্মী গ্রেপ্তার


চট্টগ্রামে ছাত্রদলকর্মীকে গুলি করে হত্যার মামলায় যুবদলের ৮ কর্মী গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় মঙ্গলবার রাতের সংঘর্ষে যুবদলের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নগর ছাত্রদলের এক কর্মী মো. সাজ্জাদ নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা মোহাম্মদ আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রায় ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনা ঘটেছে সোমবার দিবাগত রাত প্রায় ২টার দিকে নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডের বগার বিলমুখ এলাকায়। নিহত সাজ্জাদ ছিলেন নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) এমদাদুল হক বাদশার অনুসারী।

মামলার নামোল্লিখিত আসামিদের মধ্যে আছেন— চকবাজার থানার ছাত্রদলের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ও বর্তমানে যুবদলে পদপ্রত্যাশী বোরহান উদ্দিন, পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন তাঁতী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, বোরহানের সহযোগী হিসেবে মো. মিল্টন, ছোট বাদশা, মো. ইউসুফ, সবুজ ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, এমরান হোসেন, মোহাম্মদ দিদার, রিয়াজ করিম, মো. জিহান, তামজিদুল ইসলাম, মো. আরাফাত, বোরহান ওরফে ছোট বোরহান, মো. মোজাহের, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা এবং মো. নাঈম উদ্দিন।

পুলিশ জানিয়েছে, রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছয়জন এজাহারভুক্ত আসামিকে—সবুজ ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, এমরান হোসেন, মো. জিহান, তামজিদুল ইসলাম ও মো. আরাফাত। এছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুইজনকে—মো. ওসমান ও দিদারুল ইসলাম। গ্রেপ্তার সবাই যুবদলের কর্মী। তবে প্রধান আসামি বোরহান এখনও গ্রেপ্তার হয়নি এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন নগরের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের ছবি ও ব্যানার টাঙানোর নির্দেশ দেন। ওই ব্যানারগুলো খুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ব্যানার খোলার ঘটনায় জসিম নামের যুবদলকর্মীকে আটক করে মারধর করা হয়। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বোরহানের লোকজন। সেই গুলিতে সাজ্জাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা এলাকায় জায়গা দখল, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপকর্মে যুক্ত। ৫ আগস্টের পর বোরহান গাজী সিরাজের ছবি ব্যবহার করে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টাঙিয়েছেন, যদিও গাজী সিরাজ দাবি করছেন, তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, “ছাত্রদলকর্মী খুনের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার ও হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলমান।” প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকার করেছে যে ঘটনা ব্যানার ছিঁড়াকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে।

মামলার বাদী ও নিহতের বাবা মোহাম্মদ আলম বলেন, “আমার ছেলেকে যুবদল নামধারী বোরহানের নেতৃত্বে গুলিতে খুন করা হয়েছে। মূল আসামিসহ সব খুনিকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহেদ জানান, “যুবদলের পরিচয় নিয়ে বোরহান উদ্দিন কাজ করছে, কিন্তু তিনি আমাদের দলের কেউ নন। আমরা তাকে চিনি না।”

তদন্ত এখনও চলমান; পুলিশ আরও গ্রেপ্তার এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×