যমুনার তিন কিলোমিটারে তীব্র ভাঙন, বিলীন চার শতাধিক ঘরবাড়ি


যমুনার তিন কিলোমিটারে তীব্র ভাঙন, বিলীন চার শতাধিক ঘরবাড়ি

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মন্নিয়ার চর গ্রামে নদী ভাঙনের আতঙ্ক দিন দিন বেড়ে চলেছে। গত কয়েকদিনে যমুনার তিন কিলোমিটারে ছড়িয়ে থাকা তীব্র ভাঙনে ইতিমধ্যে একটি মসজিদ, প্রায় শতাধিক একর ফসলি জমি এবং চার শতাধিক বসতঘরসহ বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বর্তমানে প্রায় তিন কিলোমিটারে ছড়িয়ে থাকা ভাঙনের কারণে ঝুঁকিতে আছে প্রায় ৮ কোটি টাকার সোলার প্যানেল, মন্নিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মন্নিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ মন্নিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি মাদ্রাসা, আটটি মসজিদ এবং সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য স্থাপনা। তারা সতর্ক করছেন, দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মন্নিয়ার চর গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। উল্লেখযোগ্য, এ এলাকার অন্যান্য গ্রামও পূর্বে যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

মন্নিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, "বিদ্যালয় থেকে মাত্র কয়েক শত গজ দূরে নদী। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে কয়েক দিনের মধ্যেই বিলীন হয়ে যেতে পারে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা না হলে এ অঞ্চলে শিক্ষার মান পিছিয়ে যাবে।"

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিল আহম্মেদ জানান, "এক মাস পর আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা। প্রতিষ্ঠান যদি ভেঙে যায় তাহলে আমাদের পড়ালেখার মারাত্মক ক্ষতি হবে।" শাকিলের মতো একই আশঙ্কা জানিয়েছেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিশামনি ও শহীদ মিয়া।

দক্ষিণ মন্নিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার খানম বলেন, "আমার স্কুল থেকে কয়েকশ গজ দূরে নদীর অবস্থান। এই স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই।"

বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আকন্দ উল্লেখ করেন, "অসময়ে নদীভাঙন আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে। এখনই যদি ভাঙন ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ফসলি জমি ও বসতঘর নদী গ্রাস করে নেবে।"

স্থানীয় ইউপি সদস্য মমতাজ আকন্দ বলেন, "আমার নিজের বাড়ি গত কয়েক মাস আগে যমুনা নদীতে ভেঙেছে। এখন কোনোমতে টিকে রয়েছি। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমিসহ অসংখ্য বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।"

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান, "ভাঙনের বিষয়টি ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান বলেন, "মন্নিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি চরে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নিতে সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সেই সমীক্ষার প্রতিবেদন আমরা খুব দ্রুত প্রেরণ করবো। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টেকসই কার্যক্রম বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।"

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×