৩০৯ কোটি টাকার ক্ষতি, শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:৩৬ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২৫

সরকারি টোল আদায় চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগে ৩০৯ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতির দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার, ১২ অক্টোবর, দুদকের পক্ষ থেকে মামলার অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক এবং অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক জলিল। এছাড়াও রয়েছেন উপসচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল ও ইবনে আলম হাসান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আফতাব হোসেন খান ও মো. আব্দুস সালাম।
মামলার আসামি তালিকায় আরও রয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস (সিএনএস) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী এবং ইকরাম ইকবাল।
দুদক বলছে, এই ব্যক্তিরা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে, নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাত করেছেন। বিষয়টি দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত।
কমিশনের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়। পুরোনো দরপত্র বাতিল করে ‘একক উৎসভিত্তিক দরপত্র’ আহ্বান করা হয়, যা সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হয়। এতে সার্ভিস চার্জ নির্ধারিত হয় মোট আদায়কৃত টোলের ১৭.৭৫ শতাংশ হিসেবে, ভ্যাট ও আয়কর বাদ দিয়ে।
এই চুক্তির অধীনে সিএনএসের পাওনা বিল দাঁড়ায় ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অথচ আগের সময়ে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত, এমবিইএল-এটিটি যৌথভাবে মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় একই কাজ সম্পন্ন করেছিল। এমনকি পরবর্তী সময়ে, ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদে, ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয় ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় (ভ্যাট ও আয়করসহ), যা পাঁচ বছরে আনুমানিক ১১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
তদন্তে দুদক দেখতে পায়, সিএনএস আরও ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দাবি করেছে ‘নতুন প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যয়ের’ নামে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দুদক মনে করছে, সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা।
এ অনিয়মে সিএনএসের শীর্ষ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সেতু মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে জানায় দুদক।
এর আগে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপরই তার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), যাতে মোট জমা রয়েছে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পাশাপাশি, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক।