প্রেসক্লাব ছেড়ে শহীদ মিনারে অবস্থান এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের


প্রেসক্লাব ছেড়ে শহীদ মিনারে অবস্থান এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের

ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। দাবি আদায়ে রাজপথে লাগাতার কর্মসূচি চললেও রোববার দুপুরে পুলিশি বাধায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন তারা। পরে আন্দোলনকারীরা স্থান পরিবর্তন করে অবস্থান নেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে।

রোববার, ১২ অক্টোবর, দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে প্রেসক্লাবের সামনের এলাকায় আন্দোলনকারীদের সরাতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ কমপক্ষে চার রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং জলকামানও চালানো হয়। এতে শিক্ষক-কর্মচারীরা পিছু হটে শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর হন। ফলে কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়া যান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে আসে।

বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা শহীদ মিনারে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।

এর আগে সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে চলমান বেতন কাঠামো সংশোধন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে কর্মসূচি পালন করছিলেন। তাদের দাবি, বর্তমান প্রস্তাবিত বাড়িভাড়া ভাতা মাসিক মাত্র ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অপ্রতুল। তারা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে 'এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট' নামক সংগঠনটি। এর ব্যানারে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা অংশ নিয়েছেন। তাদের অন্যতম দাবি হলো, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করা।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা করছে। এক শিক্ষক বলেন, 'শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাপ্য কোনো সুযোগ সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছি।'

রংপুর থেকে আসা শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বক্তব্য, 'আমরা শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু আমাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে।'

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা আলোচনার পথেই অগ্রসর হয়েছেন। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, 'আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে অর্থসচিবের সঙ্গে বৈঠক করে। তাদের প্রধান দাবি ছিল ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি। বৈঠক শেষে তারা সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে আসেন এবং তাদের কর্মসূচি প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শহীদ মিনারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।'

তবে এরপরও আন্দোলনকারীদের একাংশ রাস্তা ছাড়তে রাজি হননি। এ বিষয়ে ডিসি মাসুদ আলম বলেন, 'প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা বন্ধ থাকায় পুরো ঢাকা শহরে এর প্রভাব পড়ে এবং মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। প্রথমে আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি, মাইকিং করে ১০ মিনিট সময় দিয়েছি। কিন্তু তারা রাস্তা না ছাড়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি।'

তিনি আরও জানান, উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনায় পাঁচ-ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে তার ভাষায়, 'আমাদের উদ্দেশ্য তাদের আটক করা বা মামলা দেওয়া নয়। আমরা শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করি, তারা জাতির বিবেক। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল সড়কটি যান চলাচলের জন্য স্বাভাবিক করে দেওয়া।'

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের নয়াচর ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাসুদ পারভেজ বলেন, 'জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। সরকার আমাদের সাথে প্রহসন করছে। বাড়ি ভাড়া বাবদ মাত্র ৫০০ টাকা মাসে বরাদ্দ দিচ্ছে।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১,৫০০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে অবমাননাকর দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষকরা।

চূড়ান্তভাবে, আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×