মহিষ দেশের সম্পদ, অবহেলা যেন আর না হয়: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:২০ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

মহিষ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন সম্পদ হলেও দীর্ঘদিন ধরে এর প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয়নি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, এই অবহেলা আর চলতে দেওয়া হবে না এবং সরকারের পক্ষ থেকে এর উন্নয়নে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হবে।
সাভারের মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে বাংলাদেশ বাফেলো অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বৈজ্ঞানিক সম্মেলন-২০২৫’ অনুষ্ঠানে বুধবার সকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, মহিষের দই ইতোমধ্যে দেশের প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, শুধু দই নয়, মহিষের দুধ থেকে চিজসহ নানা মূল্যবান পণ্য তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা পেলে খামারিরা নতুন বাজারে প্রবেশ করতে পারবে এবং এই পণ্যগুলো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
ফরিদা আখতার আরও বলেন, “কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মিলিয়েই আসলে খাদ্য উৎপাদন সম্পূর্ণ হয়।” তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, অনেকেই শুধুমাত্র কৃষিকেই খাদ্য উৎপাদনের একমাত্র উৎস হিসেবে দেখেন। কৃষিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহার গবাদি পশুর জন্য পর্যাপ্ত ঘাসের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির নামে চারণভূমি হারানো ভয়াবহ একটি প্রবণতা। তিনি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রাণিসম্পদ খাতে মহিষের গুরুত্ব এখনও যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন ফরিদা আখতার। তিনি জানান, দেশের মহিষের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে, যার প্রধান কারণ হচ্ছে চারণভূমির সংকট এবং অবহেলা।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ওমর ফারুক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন। এছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলুফা আক্তার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুকও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের হরিয়ানার ড. প্রীতিশ প্রান্তিক কৃষকের অভিজ্ঞতার আলোকে মুরাহ মহিষ ব্যবস্থাপনার একটি মডেল তুলে ধরেন। ইতালির দুধ উৎপাদন পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই মহিষ দুধ উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দেন ড. হিরন্ময় বিশ্বাস। সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন ড. গৌতম কুমার দেব। বৈজ্ঞানিক, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কৃষক প্রতিনিধি ও মহিষ সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরাও এতে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনের পর দুপুরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরির উদ্বোধন করেন। তিনি ল্যাবের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান ও কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের পরিচালক মো. শাহজামান খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।