মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কোনো আপস নেই: ফজলুর রহমান
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৫:২৮ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কোনো রকম আপসের প্রশ্নই আসে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম অস্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা কৃষক দলের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলুর রহমান বলেন, "আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, একাত্তরে এই অঞ্চলের কমান্ডার ছিলাম। যাদের হাতে দেশের সম্পদ লুণ্ঠিত হয়েছে, যারা অন্যায় ও দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের আর মানুষ ভোট দেবে না। তবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে একচুলও সরব না।"
তিনি বলেন, "জামায়াতে ইসলামীর মতো দল যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের রাজনৈতিক লড়াই। মুক্তিযুদ্ধ হয়নি—এমন কথা যারা বলে, তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের রক্ত কোনোদিন বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। রাজাকারের সন্তানেরা যদি এখনো ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করে, আমরা তা মেনে নেব না।"
সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমার নাম শুনেই রাজাকাররা একসময় এলাকা ছেড়ে পালাতো। আমি তাদের ভয় পাই না। এখনো যদি প্রয়োজন হয়, আবার লড়াই করব। স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই।”
ফজলুর রহমান জামায়াত-শিবিরের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “তারা দাবি করে, দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, ভারত শুধু গোলযোগ লাগিয়েছে। অথচ আমাদের ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। একদিনে ৫০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে আমাদের এলাকায়। ছাত্রশিবিরের কিছু নেতা এখনো বলে, যুদ্ধে অংশ নেওয়া ছিল ভুল—তাদের উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।”
তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াত-শিবির এমনকি তারেক রহমান সম্পর্কেও এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে, যা আওয়ামী লীগও করার সাহস পায়নি। এসব ষড়যন্ত্র দেশের জন্য ভয়াবহ, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সাবেক এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “যারা বলে নির্বাচনে যাবে না, তারাই এখন ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস, থানা পর্যন্ত নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করছে। এরা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।”
সম্মেলনে ফজলুর রহমান উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আজ মুক্তিযুদ্ধ ভালো না রাজাকার? এই প্রশ্নের উত্তর আপনারা দিন।” তখন সমবেত নেতাকর্মীরা উঁচু গলায় বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ভালো।”
এরপর সম্মেলনে গর্জে ওঠে স্লোগান: “জামায়াত–শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।” ফজলুর রহমানও সেই স্লোগানে সাড়া দিয়ে জানান, “এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এদের আর ফিরতে দেওয়া যাবে না।”
বিকেল থেকে ঢাক-ঢোল, গান-বাজনা ও উচ্ছ্বাসে জমে ওঠে ইটনা কলেজ মাঠের সম্মেলন। উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মাহফুজুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ছাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন খান মিল্কী, জেলা বিএনপি নেত্রী উম্মে কুলসুম রেখা, আমিনুল ইসলাম রতন, মাজহারুল ইসলাম, ওবায়দুল্লাহ ওবায়েদসহ শতাধিক স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতা।