গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের পরেই নির্বাচন: নাহিদ ইসলাম
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:৩৯ পিএম, ০৫ জুলাই ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যারা গণহত্যা করেছে, আমরা তাদের বিচার করবো। এই বাংলার মাটিতেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও যেসব পুলিশরা গুলি চালিয়ে আমাদের ভাইদের মেরেছে, আমরা তার বিচার নিশ্চিত করবো। বিচার ও সংস্কারের পরেই নির্বাচন। তারা বলছে বিচার দেরি হবে, কিন্তু বিচার শুরু করতে হবে। বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। যে সরকারই আসুক না কেন, এই বিচারে কেউ হাত দিতে পারবে না।’
শনিবার বগুড়ায় পর্যটন মোটেলে এক অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে শনিবার বগুড়ায় পথযাত্রা ও পথসভা করে এনসিপি।
অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি, আপনাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, পৃথিবীর যা কিছুই দেওয়া হোক, সেই ক্ষতি পূরণ হবে না। আপনাদের পরিবারের সদস্যরা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। মানুষের মুক্তির জন্য শহীদ হয়েছেন, স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন।
'ফেরাউন চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। স্বৈরশাসকদের কখনও না কখনও পতন হয়। এবারও সেই ফেরাউনের পতন হয়েছে। আমরা এখন চাই, যে কারণে শহীদরা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, একটা স্বাধীন দেশ যেখানে স্বৈরাচার থাকবে না, সেরকম একটা দেশ গঠন করবো। সেটার জন্য আমাদের আরও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের পাশে থাকতে চাই। গত এক বছর দেশে অনেক কিছু হয়েছে। আমরা হয়তো আপনাদের প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। আরও আগেই আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ছিল। আমরা সেটা পারিনি। এ জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের সঙ্গে সম্পর্কটা আজীবনের। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো আপনাদের পাশে থাকার।
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কারের বিষয়ে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘এই শহীদ পরিবার যারা আছে, তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। শুধু এই সরকার না, যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, এটা করতে হবে। এটার জন্য আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি। যে জুলাই ঘোষণাপত্রে এই শহীদদের কথা থাকবে, এই পরিবারগুলোর কথা থাকবে এবং সেটা সংবিধানে যুক্ত করা হবে। এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের কী কী সংস্কার লাগবে সেই কথা থাকবে। আমরা এই দুটি দাবিতে সারা দেশে পদযাত্রা করছি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, বগুড়া বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বগুড়ার নাম শুনলে তাদের কোথায় চাকরি দেওয়া হতো না। বগুড়াবাসীকে নির্বিচারে ভুয়া ও মিথ্যা মামলা দেওয়া হতো। জুলাই গণঅভ্যুথানে বগুড়ায় পনেরর বেশি নিহত ও সাতশর বেশি আহত হয়েছেন। আমারা শুনতে পেরেছি, বগুড়া প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। জুলাই গণঅভ্যুথানের দাবি, নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিরপেক্ষ পুলিশ ও নিরপেক্ষ আদালত।
এসময় বগুড়ার প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আপনারা নির্দিষ্ট কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বলেন, ব-তে বগুড়া, ব-তে বাংলাদেশ। এই বগুড়া থেকেই গোটা দেশে এনসিপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ন সদস্য সচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা বলেন, আমরা এসেছি আপনাদের কাছে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে। আপনারা জানেন, আমরা ছাত্ররা ৯০ এ রাজপথে নেমেছি, ৭১ এ নেমেছি, ২৪ এ নেমেছি। নারীরা রাজপথে নেমে যুদ্ধ করেছে। নারীরা আগামীতে সংসদে যাবে, বিপ্লব ঘটাবে। তারা পলিসি মেকিং করবে, আগামী বাংলাদেশের হাল ধরবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ।