বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ: ২৩টি মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, আহত পাঁচজন
- পাবনা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৯:৩৬ পিএম, ১৫ মে ২০২৫

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়নপত্র উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ২৩টি মোটরসাইকেল ও উভয় দলের দলীয় কার্যালয়। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন, যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেবোত্তর বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র উত্তোলনের শেষ দিন। ওই দিন দুপুরে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আছিম উদ্দিনসহ তিনজন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন। কিছুক্ষণ পর জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির নকিবুল্লাহ, সাবেক আমির নাসির, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লাহসহ কয়েকজন নেতাকর্মী এসে তাদের একজন প্রার্থীর জন্য মনোনয়নপত্র নিতে গেলে বিএনপির পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়।
এ নিয়ে শুরু হয় কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে জামায়াতের এক নেতাকে মারধর করা হয়। এ খবরে বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত নেতাকর্মীরা দেবোত্তর বাজারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
পরে জামায়াত নেতাকর্মীরা যোহরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেলে, বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জামায়াতের কার্যালয়ে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। সন্ধ্যার দিকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা লাঠি, রড ও লোহার পাইপসহ সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল বের করলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দেবোত্তর বাজার এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
আহতদের মধ্যে বিএনপির মামুন (৪২), কামরুল ইসলাম (৩৮), আছিম উদ্দিন (৫৫), রতন মোল্লা (৩৮) এবং জামায়াতের সাইদুল ইসলাম (৪২)-এর নাম জানা গেছে। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আহতরা স্থানীয় ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন আলম বলেন, ‘জামায়াতের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে আমাদের দলীয় অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। কলেজে কোনো ধাক্কাধাক্কি বা জোর করে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। জামায়াতের নেতারা মিথ্যাচার করছে।’
অন্যদিকে আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নকিবুল্লাহ বলেন, ‘আমরা মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে বিএনপির লোকজন বাধা দেয় এবং আমাদের এক নেতাকে মারধর করে। পরে নামাজ চলাকালে তারা মসজিদের সামনে গুলি ও বোমা ফাটায়। নামাজ শেষে আমরা প্রতিরোধে বের হই। পরে আমাদের কিছু মুসল্লি হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপির অফিসে ভাঙচুর করতে পারে।’
এ বিষয়ে আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, ‘উভয় পক্ষ একে অপরের অফিসে ভাঙচুর করেছে এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনজন ফরম তুলেছেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে ফরম তুলতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে কী হয়েছে, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।’