খুলনা সিটি করপোরেশনে দরপত্রে নিম্ন দরে উচ্চ জালিয়াতি


MARCH NAEEM 2ND/untitled-11-1745089619.webp

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) তালিকাভুক্ত ঠিকাদার রয়েছেন আট শতাধিক। উন্নয়নকাজ করতে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে (এলটিএম) গড়ে ১৫০ জন এবং উন্মুক্ত পদ্ধতিতে (ওটিএম) গড়ে ছয় থেকে আটজন ঠিকাদার আবেদন করেন। পূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকায় বেশির ভাগ ঠিকাদারই ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত নিম্নে দর দেন, এতে সরকারের বিপুল অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হয়। প্রতিযোগিতার আড়ালে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে নজিরবিহীন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে কেসিসিতে। দরপত্রে মাত্র একজন ঠিকাদার আবেদন করেছেন, তিনিই জমা দিয়েছেন। তাঁকেই মাত্র শূন্য শতাংশ নিম্নে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ঠিকাদার বিপুল অঙ্কের মুনাফা করলেও সরকারের ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। 

জানা গেছে, কেসিসির সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের ঘনিষ্ঠ এইচ এম সেলিম ওরফে সেলিম হুজুর, যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলামের প্রতিষ্ঠানের নামে এসব কাজ দেওয়া হয়। কয়েকটি কাজ তালুকদার খালেক নিজে, একটি কাজ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা এবং বাকিগুলো পছন্দের ঠিকাদাররা করেছেন।

নগরীর কে ডি ঘোষ রোড মেরামত (স্টেশন রোড থেকে সার্কিট হাউস রোড ও যশোর রোড থেকে সার্কিট হাউস) প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি। ওই দরপত্রে সেলিম হুজুরের মালিকানাধীন হোসেন ট্রেডার্স একাই অংশ নেয়। ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার কাজটি মাত্র শূন্য দশমিক ০৭১ শতাংশ নিম্নে দর দিয়েছিলেন তিনি। অন্য কোনো প্রতিযোগী না থাকায় তিনি ওই দরেই কাজটি পেয়ে যান। কাজটি তালুকদার খালেক নিজেই করেন।

নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার আটটি সড়ক মেরামতের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর। একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স তাজুল ইসলাম দরপত্রে অংশ নেন। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার কাজ মাত্র শূন্য দশমিক ০২৫ শতাংশ নিম্নে তাঁর প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। তাজুলের প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা। 

ঠিকাদাররা জানান, ওটিএম পদ্ধতি হলেও কেসিসির কাজে বাইরের ঠিকাদার অংশ নেন না। দরপত্র আহ্বানের পর অন্য ঠিকাদারদের অংশ নিতে নিষেধ করা হতো। তখন মেয়রের নির্দেশের বাইরে গিয়ে কেউ দর দেওয়ার সাহস পেতেন না। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র থাকা অবস্থায় হোসেন ট্রেডার্স ২১টি এবং তাজুল ইসলাম ১৭টি কাজ পেয়েছেন। তাদের কাজগুলোতেই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বেশি। এসব কাজ নিয়ে তদন্ত করছে দুদক।

এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, সরকারি ক্রয় আইনে একজন অংশ নিলে কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না বা সর্বনিম্ন দর কত হবে– এ ধরনের কিছু বলা নেই। আইন মেনেই তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসেন ট্রেডার্সের মালিক এইচ এম সেলিম বলেন, দুদকও এসব নিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদেরও বলেছি, অন্যরা কেন দরপত্র জমা দেয়নি, আমি জানি না। আমি সঠিক ছিলাম বলেই কাজ পেয়েছি। একই বক্তব্য ছিল তাজুল ইসলামের।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×