মাদারীপুরে আড়াই বছরের শিশুকে হত্যার অভিযোগে মা আটক
- মাদারীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১১:৫৪ এম, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

মাদারীপুর: মাদারীপুরে পরকীয়ার জেরে আমির হামজা ওরফে ইমতিয়াজ নামে আড়াই বছরের এক শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার মা ও সৎ বাবার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে নিহত ওই শিশুর লাশ সদর উপজেলার মঠেরবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত মা শারমিন বেগমকে আটক করেছে।
এর আগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে শিশু ইমতিয়াজকে তার মা মৃত অবস্থায় মাদারীপুরে দাফনের জন্য নিয়ে আসেন। তবে শিশুটির মায়ের ভাষ্য, ডায়েরিয়া আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় বসেই তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সংশ্লিষ্ট কোন প্রমাণপত্র তিনি দেখাতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর-টেকেরহাট এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী দবির ব্যাপারীর সঙ্গে পাশ্ববর্তী মঠেরবাজার এলাকার সিরাজ চৌকদারের মেয়ে শারমিন বেগমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে আমির হামজা ও দশ বছর বয়সী সামির নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। দবিরের স্ত্রী শারমিন আক্তার সম্প্রতি চাচা শুশুর আমির ব্যাপারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। দুই মাস আগে দবিরকে তালাক (ডিভোর্স) দিয়ে ছোট ছেলে আমির হামজাকে নিয়ে আমিরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় বসবাস শুরু করেন শারমিন। সোমবার রাত ১টার দিকে শিশু আমির হামজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ ওঠে তার মা শারমিন ও সৎ বাবা আমির ব্যাপারীর বিরুদ্ধে। পরে তারা ওই শিশুর লাশ দাফনের জন্য শারমিন তার বাবার বাড়ি মাদারীপুরের মঠেরবাজারে নিয়ে যান। লাশটি মাদারীপুরে আসার পরেই শিশুটির বাবা দবির খবর পান। পরে দবিরের স্বজনরা শারমিনের বাড়িতে গিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। মঙ্গলবার সকালে সদর মডেল থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে আটক করে পুলিশ।
শিশুটির স্বজনদের অভিযোগ, পরকীয়ার জেরে মা ও সৎ বাবা শিশু আমির হামজাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে।
শিশুটির বাবা দবির ব্যাপারী মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ছোট ছেলেকে ওর মা ও তার বর্তমান স্বামী আমির ব্যাপারী নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলেটা সুস্থ্য ও স্বাভাবিক ছিল। আমার কাছ থেকে জোড় করে নিয়ে গেছে ওর মা শারমিন। এরপরে আমার সঙ্গে ভালোমত কথা বলতেও দেয় নাই। আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
শিশুটির মা শারমিন বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে (আমির হামজা) আমি কেন মারবো। ওর বাবা ও তার স্বজনরা আমার ওপর ক্ষোভ রেখে মিথ্যে অভিযোগ দিচ্ছে। এক মাস আগে আমার ছেলের ডায়েরিয়া হয়েছিল, হাসপাতালে ভর্তি ছিল। পরে সুস্থ্য হয়ে উঠলেও আবারও ডায়েরিয়া হলে সে মারা যায়। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শেখ সাব্বির হোসেন জানান, শিশুটির মরদেহ রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মাদারীপুরে নিয়ে আসার পর ঘটনা জানাজানি হয়। স্বজনদের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পুলিশ কাজ শুরু করছে। পরকীয়ার অভিযোগ থাকায় অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির হোসেন বলেন, ‘শিশুটির সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য কোন আঘাতের সিমটম (উপসর্গ) পাওয়া যায়নি। তার গলায় যে চিহ্নের কথা বলা হচ্ছে, সেটি স্পষ্ট নয়। শিশুটির মা আমাদের প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, তার সন্তান অসুস্থ অবস্থা মারা গেছে। তবে এখানে পরকীয়ার বিষয়টি যেহেতু স্পষ্ট তাই পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। শিশুটির বাবা ও তার স্বজনরা থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’