আওয়ামী লীগ নেতাদের চাঁদায় এনসিপির ব্যানারে ইফতার
- খুলনা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:০৮ এম, ৩০ মার্চ ২০২৫

খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা চাঁদায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ব্যানারে ইফতার মাহফিল আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী সমাজ ও সচেতন মহলে চলছে সমালোচনা।
কয়রা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তাঁর অনুসারী আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন একই কমিটির সদস্য সচিব এসকে গালিবসহ একাধিক নেতাকর্মী।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) কয়রা উপজেলা পরিষদের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করে কয়রা এনসিপির ব্যানারে ইফতার মাহফিল করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী। ওই ইফতার মাহফিলে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব গালিব বলেন, ‘কয়রায় এখন পর্যন্ত এনসিপির কমিটি হয়নি। এ জন্য গ্রহণযোগ্য ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের সংগঠিত করার কাজ চলছে। দলের কমিটিই হয়নি অথচ তার ব্যানারে ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করে ছাপানো দাওয়াতপত্র দিয়ে চাঁদা তুলেছেন গোলাম রব্বানী ও আব্দুর রউফ। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।’
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রব্বানী ও তাঁর অনুসারী আব্দুর রউফ এনসিপির ইফতার আয়োজনের কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলার মহারাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘গোলাম রব্বানী, রউফসহ কয়েকজন এসে ইফতার অনুষ্ঠানের জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি টাকা দিয়েছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীপন্থি আরেক ইউপির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইফতার মাহফিলে চাঁদা না দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই তিনি চাঁদা দিয়েছেন।
ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্রে আয়োজকদের কারও নাম না থাকলেও যোগাযোগের জন্য দুইটি ফোন নাম্বার দেওয়া আছে; যার একটিতে কল করলে কথা হয় গোলাম রব্বানীর সঙ্গে। অপর নাম্বারটি আব্দুর রউফের।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘হিতাকাঙ্ক্ষী ও নিজেদের অর্থে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। তাদের ভালো কাজ দেখে নিজ দলের অনেকেরই হিংসা হচ্ছে। তারাই এসব মিথ্যাচার করছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলার মুখ্য সংগঠক ইমদাদুল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে থেকেছেন তারা। কৌশলে গোলাম রব্বানী আহ্বায়কের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। ইফতার আয়োজনে খরচের উৎস সম্পর্ক জানতে চাইলে সে নিজ মুখে চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।’
এনসিপির খুলনার সংগঠক হামীম আহম্মেদ রাহাত বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির লোকজনই দলটির কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এনসিপির খুলনা জেলা কমিটি গঠন হয়নি, উপজেলা কমিটির তো প্রশ্নই আসে না। কয়রায় এনসিপির সাইনবোর্ড ও নাম ভাঙিয়ে আওয়ামীপন্থিদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।’