সিলেটে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নানা প্রতিবন্ধকতা, জনবল ও সরঞ্জাম সংকট


Jan 2025/Hospital.jpg

জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকারের নির্ধারিত ফি অনুযায়ী শারিরীক অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়- এটা অনেকের অজানা। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে এখনো সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি অজানা রয়ে গেছে। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই কিংবা যেসব উপজেলায় আগ্রহ রয়েছে, সেসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ জনবল সংকটে অনেকাংশে এসব সেবা বন্ধ রয়েছে। প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গেলে যেখানে দিগুণ টাকা গুনতে হয় একজন রোগীকে। সেখানে সরকারি হাসপাতালে এসব পরীক্ষা-নিরিক্ষা নির্ধারিত ফি দিয়েই নিমিষেই করা যায়। 

এছাড়াও সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে দালালদের প্রভাব; যেখানে হাসপাতালের সম্মুখ চত্বরে অবস্থান করেন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালের প্রতিনিধিরা রোগীকে বুঝিয়ে প্রাইভেটে নেয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। 

সরেজমিনে সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, সরকারি নির্ধারিত যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে, তার মধে মাত্র তিনটি পরীক্ষা চালু আছে। যার মধ্যে যক্ষ্মা, আরবিএস ও এক্স-রে। তবে, এসব পরীক্ষা চালু থাকলেও হাসপাতালে এসে সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা কম। যেখানে দাপট রয়েছে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর। 

সিলেটের সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো সচল থাকলেও জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত রয়েছে সেবা। সেই সাথে সাধারণ মানুষের অনাগ্রহ রয়েছে। 

সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ মৌলভীবাজারসহ সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ,জকিগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমাসহ সিংহভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি সেবায় একই অজুহাত জনবল সংকট কিংবা নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র বা সরঞ্জাম না থাকা। 

সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবে রোগনির্ণয় ফির পার্থক্য: সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে খরচের পার্থক্য অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা মূল্য তালিকা টানানো হয়। তালিকায় রুটিন পরীক্ষা যেমন রক্তের সিবিসি ১৫০-৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই টেস্ট বেসরকারিভাবে করাতে ৪০০-৪৫০ টাকা গুনতে হয়। সরকারিতে কিডনির ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা মূল্য ৫০ টাকা, বেসরকারিতে লাগে ৪০০ টাকা। সরকারিতে রক্তের এসজিপিটি পরীক্ষায় ৭০ টাকা, বেসরকারিতে ডায়াগনস্টিক ভেদে ৫০০-৭০০ টাকা খরচ পড়ে। সরকারিতে এসজিওটি ৭০, বিলোরুবিন ৬০, ক্যালসিয়াম ৮০, লিপিড প্রোফাইল ৩০০, ইউরিন/এমই ২০, টি থ্রি ২০০, এফটি থ্রি ২০০ ও টিএইচএস ২৫০ টাকা। অপরদিকে, পপুলার, পদ্মা বা ল্যাবএইডের মতো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা প্রতি সর্বনিম্ন ৫০০-১ ০০ টাকা লাগে।

সরকারিতে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা যেমন বুকের এক্সরের জন্য ২০০ টাকা খরচ হলেও বেসরকারিতে একই পরীক্ষার জন্য ৬০০-১২০০ টাকা খরচ পড়ে। সরকারি হাসপাতালে মাথার এক্সরের খরচ ১৫০ টাকা, বেসরকারিতে ৮০০-১২০০ টাকা। কোমর বা অ্যাবডোমেন এক্সরে করতে সরকারিতে ২০০-৩০০ টাকা, বেসরকারিতে ৯০০-১২০০ টাকা খরচ হয়।

সরকারি হাসপাতালে ব্রেনের সিটি স্ক্যান করাতে ২ হাজার টাকা, বেসরকারিভাবে ৮০০০-৯০০০ হাজার টাকা খরচ হয়। সরকারিতে এমআরআই ৩ হাজার হলেও বেসরকারিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারভেদে তা ১৫০০০-১৮০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগে। সরকারিতে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা খরচ হয় ১১০-২২০ টাকা, বেসরকারিতে লাগে ১ হাজার ২০০ টাকা।

এ বিষয়ে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মইনুল আহসান বলেন, ‘আমাদের এখানে বর্তমানে যক্ষ্মা পরিক্ষা, রবিএস এবং এক্স-রে চালু আছে। বাকিগুলো ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে কথা বলে চালু করা হবে। আমি যখন দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ছিলাম তখন সেখানে সব ধরনের টেস্ট সেবা ঊর্ধ্বতন মহলে কথা বলে চালু করেছিলাম। তবে বিশেষ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শাখার জন্য নিদিষ্ট জনবল না থাকার কারণে এই সেক্টরে সমস্যা দেখা দেয়।’

সিলেটের সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু সালেহীন খান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে দুয়েকজন ল্যাব টেকনিশিয়ান থাকলেও এক্স-রে করার জন্য কোনো রেডিওগ্রাফার নেই। এ ছাড়া, ছয় মাস থেকে আমাদের এখানে আল্ট্রাসনোগ্রামের টেস্ট করানোর জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। জনবল সংকটের বিষয়টি বার বার ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েও কোনো ফলাফল পাচ্ছি।’ 

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×