ছাত্রীকে ওড়না ছাড়া দেখতে চান অধ্যক্ষ, স্ক্রিনশট ঝুলছে কলেজের গেটে
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:২৪ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উদ্দেশে অশালীন বার্তা পাঠানোর অভিযোগ ঘিরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে নওগাঁয়। কলেজছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে অধ্যাপক সামসুল হকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক স্ক্রিনশট। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এসব স্ক্রিনশট কলেজের মূল ফটকে ঝুলিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে দেখা যায়, অধ্যক্ষ সামসুল হক ছাত্রীদের ‘ওড়না ছাড়া’ দেখতে চাওয়ার ইঙ্গিত দেন এবং তাদের ছবি চেয়ে আপত্তিকর বার্তা পাঠান। এমন কিছু স্ক্রিনশটে তার পক্ষ থেকে সৌন্দর্যবিষয়ক ব্যক্তিগত মন্তব্যও দেখা গেছে।
একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, অধ্যক্ষ একজন ছাত্রীকে বলেন, “আরও সুন্দরী ছবি আছে তোমার।” ছাত্রী জবাবে লেখেন, “আর নেই স্যার। আমি সুন্দর না।” জবাবে সামসুল হক বলেন, “আছে আছে, ওড়না ছাড়া।” ছাত্রী তখন সাফ জানিয়ে দেন, “নেই স্যার, স্যরি স্যার।” অধ্যক্ষ তখন বলেন, “কলেজে দেখেছি তো।” এরপর ছাত্রী বলেন, “না স্যার। স্যরি। নেই স্যার। মাফ করবেন।” সামসুল হকের পরবর্তী মন্তব্য ছিল, “ওকে, সামনেই দেখবো। অনেক অনেক অনেক ভালো থেকো। বাই।”
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী জানান, “এই বার্তালাপ প্রায় দুই বছর আগের। তখন আমি বিএমসি মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তাম। অধ্যক্ষ স্যার প্রায়ই আমাকে নানা অজুহাতে ডাকতেন এবং ফেসবুকে যুক্ত হয়ে ছবি দেখে অশ্লীল মন্তব্য করতেন। একসময় তিনি ওড়না ছাড়া ছবি চান। তখনই আমি তাকে ব্লক করে রাখি এবং স্ক্রিনশট রেখে দিই।”
তিনি আরও বলেন, “পরে স্যার নওগাঁ সরকারি কলেজে বদলি হয়ে আসেন এবং আমি এখানেই ভর্তি হই। ভয়ে এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু যখন দেখি আরও অনেক ছাত্রীর স্ক্রিনশট ভাইরাল হচ্ছে, তখন আমিও প্রতিবাদে এগিয়ে আসি।”
আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী তার ফেসবুক স্টোরিতে হিন্দি গানসহ একটি বার্তা পোস্ট করলে অধ্যক্ষ সেখানেও মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন, “আমি কি তার মধ্যে?” - যেখানে স্টোরিতে লেখা ছিল, “কিছু মানুষের সাথে দূরত্ব হওয়া ভীষণ দরকার।”
আরেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, “কলেজে সাংস্কৃতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণের পর অধ্যক্ষ স্যার আমাকে ফেসবুকে যুক্ত করেন এবং তারপর থেকে নিয়মিত অশালীন বার্তা পাঠাতে থাকেন। দেখা হলেই উনি আমার চেহারা, পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করতেন। তার দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল কুরুচিপূর্ণ।”
অন্য এক স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক ছাত্রীকে উদ্দেশ করে অধ্যক্ষ বলেন, “নতুন বউ সাজে দেখা করলে না?” উত্তরে ছাত্রী বলেন, “স্যার ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। স্টল থেকে বের হতে পারিনি।” উত্তরে সামসুল হক বলেন, “আমি তোমার বিউটি থেকে বঞ্চিত হলাম।” ওই ছাত্রী তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনার জন্যই এত সুন্দর আয়োজন হয়েছিল।” জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, “আমাকে দেখা দিলে আমিও করতাম।” এরপর তিনি আবার প্রশ্ন করেন, “কবে দেখা দিবে ওই একই সাজে?”
এই ছাত্রী বলেন, “স্যার প্রায়ই একান্তে দেখা করতে চাইতেন। আমি নানা ছুতোয় এড়িয়ে যেতাম। বুঝতে পারলে একদিন আমাকে রোভার ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থেকে বাদ দেন। এমনকি কলেজ থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন।”
একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা লিপি বেগম বলেন, “একজন শিক্ষক কীভাবে তার ছাত্রীর কাছে এমন অশালীন প্রস্তাব দিতে পারে! তার এসব কাণ্ড দেখে এখন আমি মেয়েকে ক্লাসে পাঠাতে ভয় পাই। যতদিন সামসুল হক এই কলেজে আছেন, ততদিন আমার মেয়ে ক্লাসে যাবে না। তাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সামসুল হকের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিক পরিচয়ে মেসেজ পাঠানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।