ডাকসু নির্বাচনে বাম সমর্থিত প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৫:৪১ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫

আগামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বাম ছাত্র সংগঠন সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্যানেলের জিএস প্রার্থী মেঘ মল্লার বসু ‘সমতায়-প্রতিরোধে, নিরাপদ ক্যাম্পাস’ স্লোগানকে সামনে রেখে ইশতেহারটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনের পর তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচারণা শুরু করেন।
ইশতেহারে মোট ১৮টি প্রধান বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
ডাকসুর কাঠামো ও ক্ষমতার সংস্কার: কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্টকরণ, সিনেটে ১০ জন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা, নির্বাচিত প্রতিনিধির অপসারণ শিক্ষার্থীদের গণভোটের মাধ্যমে নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার মানোন্নয়ন: শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ ও বেসরকারিকরণ বন্ধ, ইউজিসির কৌশলপত্র বাতিল, Public-Private Partnerships (PPP) ও IQAC প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষাবিধ্বংসী উদ্যোগ প্রতিহত করা।
গবেষণায় অগ্রাধিকার: বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের ১০ ভাগ গবেষণার জন্য বরাদ্দ, গবেষণাগারের আধুনিকায়ন, শিক্ষার্থীদের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ ও ফেলোশিপ প্রদানের উদ্যোগ।
আবাসন সংকট সমাধান: হলগুলোতে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব বন্ধ, পুরোনো ভবন সংস্কার, নতুন ভবন নির্মাণ, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
নারীবান্ধব ক্যাম্পাস: নারী শিক্ষার্থীর সাইবার নিরাপত্তা, চলাফেরার স্বাধীনতা, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা, গর্ভবতী ও সদ্য মা হওয়া শিক্ষার্থীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন।
জাতিসত্তার অধিকার সুরক্ষা: পাহাড় ও সমতলের সব জাতিসত্তার ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ।
খাদ্য ও পুষ্টি: প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ক্যান্টিন চালু, খাদ্যের মান বৃদ্ধি ও ভর্তুকি নিশ্চিত করা।
শারীরিক স্বাস্থ্য: শহিদ বুদ্ধিজীবী মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকীকরণ, ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা: মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট সেন্টার, থেরাপি ইউনিট বৃদ্ধি, মানসিক চাপ ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা কর্মশালা।
লাইব্রেরি ও কমনরুম: কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা, আন্তর্জাতিক জার্নাল ও ই-বুক ব্যবহারের সুবিধা, রিডিং রুম ও কমনরুম সম্প্রসারণ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা সচল করা: বই ও গবেষণাপত্র প্রকাশ, অনুবাদ কেন্দ্র স্থাপন।
মুক্ত পরিসর পুনরুদ্ধার: বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ও পরিবেশ সংরক্ষণ, মাস্টার প্ল্যান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুনর্মূল্যায়ন।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি: হল-অনুষদে নাট্য, সংগীত, নৃত্য ও চারুকলা চর্চার ব্যবস্থা, মাসিক পত্রিকা প্রকাশ ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।
পরিবহন: বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগে শাটল সার্ভিস চালু, বাস সংখ্যা ও রুট বৃদ্ধি।
ক্রীড়া: কেন্দ্রীয় ও হলসমূহের মাঠ শুধুমাত্র খেলার জন্য, জিমনেশিয়াম ও সুইমিংপুল নারীবান্ধব, নতুন মাঠ নির্মাণ ও সংস্কার।
পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষা: ধূলা-দূষণ নিয়ন্ত্রণ, গণশৌচাগার স্থাপন, গাছ সংরক্ষণ ও পরিকল্পিত সবুজায়ন।
গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন ও মতপ্রকাশ: ৭৩-এর অধ্যাদেশের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল, শিক্ষার্থীর মানবাধিকার ও সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করা।
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংরক্ষণ: মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ, আর্কাইভ স্থাপন, গবেষণা বৃত্তি এবং আন্তর্জাতিক সংহতি গড়ে তোলা।
প্যানেলের এই ইশতেহার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকারের পাশাপাশি নিরাপদ, স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ শিক্ষামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত।