'আওয়ামী লীগ বাদে নির্বাচন হলে লাখ লাখ সমর্থক ভোট বর্জন করবে'


'আওয়ামী লীগ বাদে নির্বাচন হলে লাখ লাখ সমর্থক ভোট বর্জন করবে'

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক ভোট বর্জন করবে।

নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তার দলকে বাদ দিয়ে যে কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের অধীনে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং ভারতে অবস্থান চালিয়ে যাবেন।

শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের সময় দেশ ছাড়েন। তার বিদায়ের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তারা আগামী ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে।

শেখ হাসিনা রয়টার্সকে বলেন, “আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায্যই নয়, বরং আত্মঘাতী।” তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনী বৈধতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সমর্থক, যদি তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন, ভোটে অংশ নেবেন না। কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।”

তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা আমাদের ভোটারদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলছি না। তবে আশা করি ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবো।”

বাংলাদেশে ১২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি মনে করা হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে এবং ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনে অংশ নেয়ার শর্ত হচ্ছে—সেখানে বৈধ সরকার থাকতে হবে, সংবিধান অটুট থাকতে হবে এবং প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকতে হবে।”

তিনি আরও জানালেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানকালীন সহিংসতার সময় তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা আনা হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই সময় প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন এবং আরও কয়েক হাজার আহত হন। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন, বলেন, “এই কার্যক্রমগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটক। আমাকে আগে নোটিশ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি।”

শেখ হাসিনা বলছেন, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক পরিসরে ফের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তা সরকারে হোক বা বিরোধী দলে হোক। তবে তার বা পরিবারের সরাসরি নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই।

তিনি যোগ করেছেন, “এটা আসলে আমার বা আমার পরিবারের বিষয় নয়। দেশের জন্য প্রয়োজন সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।” ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তার পিতা ও তিন ভাই নিহত হন। বর্তমানে তিনি নির্বিচ্ছিন্নভাবে নয়াদিল্লিতে বসবাস করছেন, তবে পরিবারের ইতিহাসের কারণে সতর্ক থাকছেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×