নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ধন্যবাদ জানালো সমন্বয়ক কাদের, মাহিন ও আরমানকে
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:১৯ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের পেছনে ‘ছদ্মবেশী শিবির’ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে মুখ খুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন সাবেক আরেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও আরমান হোসেন। তিন সাবেক ছাত্রনেতার এই প্রকাশ্য অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
আব্দুল কাদের সম্প্রতি মন্তব্য করেন, "শিবিরের যে সকল ছেলেরা ছাত্রলীগে গুপ্ত আকারে প্রবেশ করতো তারাই বেশি আগ্রাসী ছিল। হলে হলে ছাত্র নির্যাতন, শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিবির থেকে আগত ছাত্রলীগরাই সম্মুখ সারিতে থাকতো।"
তার এ বক্তব্য ফেসবুকে আলোড়ন সৃষ্টি করলে এনসিপি নেতা মাহিন সরকার মন্তব্যের নিচে লিখেন, “ট্রু”, আর আরমান হোসেন মন্তব্য করেন, “শতভাগ সত্য বলেছে (আব্দুল কাদের)। ১৫ই জুলাইয়ের আক্রমণে ছাত্রলীগের ভেতরে থাকা শিবিরের লোকজনের অংশগ্রহণ এবং মামলার আসামী হওয়া এর প্রমাণ।”
এ তিনজনের বক্তব্য সামনে আসার পর শনিবার (২ আগস্ট) ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস লীগ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে তাদের বক্তব্যের স্ক্রিনশটসহ একটি পোস্ট করা হয় তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে।
পোস্টে বলা হয়, “সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, মাহিন সরকার ও আরমান হোসেন আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি দিয়েছে, যা আমরা বছরের পর বছর অভিযোগ করে আসছি। সত্য কখনো গোপন থাকে না। সত্যগুলো এভাবেই প্রকাশিত হবে। সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, মাহিন সরকার ও আরমান হোসেনকে ধন্যবাদ এই সত্যগুলো প্রকাশ করার জন্য।”
পোস্টটিতে আরও লেখা হয়, “আমরা বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছি, গুপ্ত শিবিরের একাংশ ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে নানা রকম অপকর্মে জড়িয়ে জনমনে ছাত্রলীগের প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি করেছে। যার অন্যতম উদাহরণ ছিলো বুয়েটের আবরার হত্যা। এছাড়াও গেস্টরুম নির্যাতনসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নানা রকম অপকর্মে যাদের নাম বারবার সামনে এসেছে, হলগুলোতে এখনো তাদের শক্তিশালী উপস্থিতিই প্রমাণ করে, তারা গুপ্ত শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রলীগে মিশে ছিলো। শিবিরের সাবেক সাথী ও বর্তমান সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের আজকের স্বীকারোক্তি আমাদের এই অভিযোগকে আরো বেশি সত্য প্রমাণ করে।”
ছাত্রলীগের নামে হওয়া সহিংসতার পেছনে গোপনে ঢুকে পড়া শিবিরকর্মীদের দায়ী করে ফেসবুক পোস্টে আরও বলা হয়, “১৫ জুলাইয়ের ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে, বিজয় একাত্তর হলে হামলা, তা যে সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ও একপাক্ষিক, তা ইতোমধ্যেই প্রথম আলো’র প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সূত্রে সবাই জেনেছেন। পাশাপাশি আজ আরমান হোসেনের মন্তব্যে এটাও প্রমাণিত হলো, শিবির ও ছাত্রদল প্রথমে বিজয় একাত্তর হলে হামলা করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গুপ্ত শিবির ছাত্রলীগকে দেশবাসীর সামনে হামলাকারী হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য পাল্টা হামলা করে।”
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর মাহিন সরকার একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ ৩৯১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে ৮০০ থেকে ১ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
পরে ২৭ অক্টোবর আরেকটি মামলা করেন আরমান হোসেন, যেখানে ২২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এই দুই মামলাই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে ছাত্রলীগে ‘অনুপ্রবেশকারী’ শিবির সদস্যদের ভূমিকা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রসঙ্গ।