ভুয়া জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করলো সরকার
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৫০ এম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত অংশগ্রহণ ছাড়াই জুলাই-যোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া ১০৪ জনকে ভুয়া ঘোষণা করেছে সরকার। যাচাই-বাছাইয়ে তাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না মেলায় গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ হওয়ায় ২৩ জনের একটি গেজেট রাখা এবং অন্যটি বাতিল করার প্রক্রিয়াও চলছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আহত জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে প্রকাশিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কিছু ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আন্দোলনে অংশ নেননি কিংবা আহতও হননি। জেলা পর্যায়ের তদন্তে প্রতারণার প্রমাণ মেলায় সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো তাদের নাম গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
দেশের আট বিভাগে তদন্তে দেখা গেছে, ময়মনসিংহে ২০ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও একজনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে। সিলেটে ২৬ জন ভুয়া ও একজনের নামে পুনরায় গেজেট, চট্টগ্রামে ৩৪ জন ভুয়া ও চারজনের নামে দুবার গেজেট, খুলনায় ৫ জন ভুয়া ও চারজনের নামে পুনরায় গেজেট, রংপুরে দুইজন ভুয়া, ঢাকায় সাতজন ভুয়া ও সাতজনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহীতে নয়জন ভুয়া ও চারজনের নামে পুনরায় গেজেট এবং বরিশালে দুইজনের নামে গেজেট প্রকাশ হয়েছে।
সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ২৩ জনের নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ হয়েছিল, আর বাকি ১০৪ জন আন্দোলনে অংশ না নিয়েই জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে সুবিধা ভোগ করছিলেন। এই তালিকা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
ময়মনসিংহ বিভাগের বাতিলের তালিকায় রয়েছেন সৈয়দ তরিকুল ইসলাম (গেজেট নম্বর ৮০), মোহাম্মদ নুরুল আমিন (৮৮), তানভীর আহমেদ (১২১), আছিয়া খাতুন (১২৩), রুহুল আমিন (১২৭), মো. আমি হাসান রূপম (১২৯), মোহাম্মদ আকিব তালুকদার (১৪৬), মো. সুজন মিয়া (১৫৫), মো. ইমন শাহারিয়া (১৬৫), আশরাফুল ইসলাম জাসাম (১৭২), মুশফিকুর রহমান (১৯৭), মো. সজিব (১৯৮), সোহাগ মিয়া (১৯৯), রুবেল মিয়া (৩৬২), মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩৬৩), রাব্বি হাসান শ্রীনি (৫৬৫), মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক (৫৬৬), মো. আবু ফরিদ আহামেদ (৫৬৭), আফরিনা জান্নাত (৫৭০) ও মাজহারুল ইসলাম (৬৪৮)।
ঢাকা বিভাগে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত সাতজন এবং পুনরায় গেজেট হওয়া আরও সাতজনের নামও প্রকাশ পেয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন রাসেল (৬৭০), খন্দকার রাজ (১০৬৩), রাফিউল নাঈম (১১৬১), রাশেদুল ইসলাম অনিক (১১৬৩), আব্দুল্লাহ আল রাহাত (১১৬৬), মো. মঞ্জমুল আলম জিসান (১৯৩২), মো. সাইফুল ইসলাম শুভ (২৬৮২), রিয়াজুল হাসান (২৮৩৮), বেলায়াত হোসেন শাহীন (২৮৩৯), মুজবর মৃধা (৩৯৬৪), জিহাদ (৩৪১৩), মো. রফিকুল সরদার (৭৩৩), মো. মাসুদুর রহমান (৬৪৫), মোছা রুমি (৩৪৩১) ও মো. রিয়াজ শরীফ (১৩৮২)।
চট্টগ্রাম বিভাগে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত ৩৫ জনের তালিকায় রয়েছেন মো. শাগর (৩২৮), আবদুল্লাহ আল নোমান (৪৬৯), নাইম উদ্দীন শাঈদ (৪৯২), মোহা. শরিফুল ইসলাম (৫১৫), শাহাদাত ইকবাজ তাহনি (৫২১), তাহমিনা ইকরার তারকি (৫২২), মাহাবী তাজওয়ার (৫৩৪), জসিম উদ্দিন (৫৪২), মো. আতিকুল ইসলাম (৫৫২), মো. ইয়াছিন (৫৬০), আরফাতুল ইসলাম (৫৯৫), ফরহাদ আলম (৬০১), মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান (৬০৩), মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর (৬১৬), পঠন চন্দ্র নাথ (৬২২), মিশকাত আলম রিয়াদ (৬৭৫), মো. এমরান (৭৯৭), মাহাম্মদ সাগর (৭৬৮), নুরুল্লাহ (৭৮৯), সোহাম্মদ রাফি (৭৯৯), ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস (৮০২), মোছা. ইছনিয়া আকতার (৮২৪), মো. মাঈনুদ্দীন (৮২৫), সাইমন (৯৭৩), মো. আরিফ (১৯৭৬), রাসেল (১৯৮৬), রমজান আলী (৯৮৭), মাহিম চৌধুরী (৯৯৯) ও রিফাত বিন আল (১৯৯৯)।
জুলাই আন্দোলনের সময় সক্রিয় না থাকা অনেকেই পরে ‘জুলাই-যোদ্ধা’ হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। পরে ভুয়া প্রমাণিতদের তালিকা বাতিল ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে ১,১১৮ জন, গ শ্রেণিতে ১২,০৮০ জন এবং নিহত ৮৪৪ জনসহ মোট ১৪,৬৩৬ জনের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন নিহতের গেজেট ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, যাচাই-বাছাইয়ে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান।”
তিনি আরও বলেন, “যারা জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কি না; সেসব বিষয় গেজেট বাতিলের পরই নির্ধারণ করা হবে।”