সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়তে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার


সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়তে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সভায় তিনি এই বক্তব্য দেন।

ইউনূস জানান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কার্যকর অর্থায়ন ছাড়া বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হলেও তা অপরিহার্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়া আমার জন্য গর্বের বিষয়। এখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। আমাদের চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার অপরিহার্য। তার ভাষায়, “একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।”

তিনি বিশ্ব নেতাদের সামনে পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন, যা বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এগুলো হলো:

প্রথমত, দেশীয় সম্পদ ন্যায্যভাবে আহরণ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন নিশ্চিত করা। এজন্য করব্যবস্থাকে প্রগতিশীল, স্বচ্ছ এবং বহুজাতিক করপোরেশনের ন্যায্য অংশগ্রহণমূলক করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়ানো, যাতে লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে কাজে লাগে এবং কর্মসংস্থান, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়।

তৃতীয়ত, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসনে সংস্কার এনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করা এবং ঋণকে কঠোরতার পরিবর্তে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।

চতুর্থত, স্বচ্ছতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং অবৈধ অর্থ প্রবাহ রোধ করা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে সম্পদ কোথায় ব্যয় হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

পঞ্চমত, সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো, যাতে তারা টেকসই বাসস্থান, জলবায়ু-সহনশীল কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের সুযোগ পায়।

ইউনূস বলেন, “দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×