রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ১১ উপায়


রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ১১ উপায়

রাগ প্রাকৃতিক অনুভূতি, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে জীবনে একের পর এক ধ্বংসসৃজনী সিদ্ধান্তের কারণ হয়। যদি আপনি ভাবেন ‘একটু রাগ করলেই কি হবে’, তা হলে বিশ্বাস করুন; একটু রাগই অনেক সম্পর্ক, কাজ ও স্বাস্থ্যের উপর স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। নিচের ১১টি কৌশল রাগ নিয়ন্ত্রনে বাস্তবমুখী এবং দ্রুত কাজে লাগার মতো -

১) কথার আগে থামুন এবং ভাবুন

কোনো উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে ততক্ষণ কিছু না বলা শিখুন। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অনেক সময় অনুতপ্ত করে দেয়। একটি মানসিক “স্টপ সাইন” কল্পনা করুন, তারপর ঠাণ্ডা মাথায় আপনি যা বলবেন তা ধীরে করে ঠিক করুন।

২) মুহূর্তে স্থান বদল করুন

রাগ যখন চরমে পৌঁছায়, তখন ঝামেলার স্থান থেকেই দ্রুত সরে আসুন। সাময়িক দূরত্বই রাগকে প্রশমিত করে। যদি পুরো জায়গা ছাড়তে না পারেন, বসুন বা অবস্থান পরিবর্তন করুন।

৩) নিজেকে “টাইমআউট” দিন

বিভিন্ন চাপপূর্ণ সময়ে কাজ থেকে ছোট বিরতি নিন। নীরবভাবে কয়েক মিনিট একা থাকলে মন স্বচ্ছ হবে এবং পরিস্থিতি কৌশলে মোকাবিলা করতে পারবেন।

৪) লিখে ফেলুন

আপনার রাগ কেন হচ্ছিল, কী ঘটল এবং আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন; সবকিছু লিখে রাখুন। পরে সেই নোট পড়লে করণীয় সহজেই বোঝা যাবে এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য মিলবে।

৫) শারীরিক কার্যকলাপে ঝাঁপ দিন

দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো বা সাধারণ ব্যায়াম রাগ নবিৎ কমায়। ঘাড়-কাঁধ ঘোরানো, ধীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরের প্রতিটি অংশে টান দিয়ে ছাড়ুন; এগুলো তৎক্ষণাৎ কাজ করে।

৬) গভীর শ্বাস এবং কল্পনাভিযান ব্যবহার করুন

নাক দিয়ে ধীর শ্বাস নিন, মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন; ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ধীরে ধীরে গণনা করুন। চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্তির একটি দৃশ্যে কল্পনা করুন এবং ভেতরে শান্তি বলুন “শান্ত থাক”, “সব ঠিক হবে” ইত্যাদি শব্দগুলি বারবার বলুন।

৭) উল্টোভাবে বড় সংখ্যা গণনা করুন

১০০ থেকে পিছন দিকে গোনা বা মনোযোগ সরিয়ে নিতে এমন গণনা রাগকে দ্রুত বিরতির সুযোগ দেয়; এতে আপনি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে সময় পান।

৮) সমাধান খুঁজুন, অভিযোগ নয়

রাগের উৎসকে চিহ্নিত করে কার্যকর সমাধান প্রয়োগ করুন। অভিযোগ করলেই পরিস্থিতি খারাপ হবে; বদলে বাস্তবসম্মত নিয়ম বা সীমা নির্ধারণ করুন; যেমন: দরজা বন্ধ রাখা বা খাবারের সময় নির্ধারণ করা।

৯) ক্ষমা চর্চা করুন

ক্ষমা মানেই দুর্বলতা নয়, এটি শক্তির পরিচায়ক। মনের ভেতর কাউকে ক্ষমা করে দিলে তিক্ততা কমে এবং রাগ ধীরে মুছে যায়। মুখে বলতে না পারলেও অন্তরে চেষ্টা করুন।

১০) সাহায্য চাইতে জানুন

আপনি যদি বারবার রাগের ফলে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেন বা অনুতপ্ত কাজ করেন, পেশাদার সহায়তা নিন। থেরাপি বা কাউন্সেলিং রাগ নিয়ন্ত্রণে অতি কার্যকর হতে পারে।

১১) মনোযোগ বদলে দিন ও সৃজনশীলতা কাজে লাগান

বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য আলোচনা করুন, ডায়েরি লিখুন, গান শুনুন বা কোনো সৃষ্টিশীল কাজে মন দিন; চিত্রকলা, গান, বাগান করা ইত্যাদি রাগ নিঃসরণে উপকারী। রাগকে ধ্বংসাত্মক নয়, সৃষ্টিশীল কাজে কাজে লাগান।

শেষ কথা 

রাগ আপনার শত্রু নয়, এটি সংকেত; কিন্তু যে সংকেতটি আপনি নিয়ন্ত্রণ না করলে আপনাকেই ধ্বংস করে ফেলবে। এই ১১টি উপায় নিয়মিত অনুশীলন করলে রাগ মুছবে, সম্পর্ক এবং কাজ দুটোই বাঁচবে। আর যদি নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ না হয়, দেরি না করে সাহায্য নিন বিশেষজ্ঞদের, আপনি এখনই বদলাতে পারুন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×