কর্মীদের অতিরিক্ত চাপ দিলে কি অফিস লাভবান হয়, নাকি ক্ষতিগ্রস্ত?


কর্মীদের অতিরিক্ত চাপ দিলে কি অফিস লাভবান হয়, নাকি ক্ষতিগ্রস্ত?

অফিসে সর্বোচ্চ ফলাফল আদায়ের লোভে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ চাপিয়ে দেয়। বাইরে থেকে এটিকে “দক্ষতা বাড়ানো” মনে হলেও বাস্তবে এর প্রভাব উল্টো; এটি কর্মীদের মনোবল, স্বাস্থ্যের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

চাপের প্রভাব: ক্লান্তি ও ভুলভ্রান্তি

দীর্ঘ সময় চাপের মধ্যে কাজ করতে হলে কর্মীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। ঘুমের সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ক্লান্তি এবং মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে ছোটখাটো ভুল বেড়ে যায়, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং সহকর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে।

অফিস থেকে ব্যক্তিজীবনে চাপের বিস্তার

কাজের চাপ যদি কর্মঘণ্টা শেষে ঘরেও লেগে থাকে, তাহলে তা ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভারসাম্যহীন এই জীবন কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ ও সৃজনশীলতা দুটোই কমিয়ে দেয়।

গবেষণা যা বলছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, যারা সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করেন, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি ১৭ শতাংশ বেড়ে যায়। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ আরও জানায়, টানা ৯০ মিনিট কাজ করলে উৎপাদনশীলতা কমে এবং ভুল করার প্রবণতা বেড়ে যায়।

আর্থিক ক্ষতির হিসাব

মার্কিন এক গবেষণায় দেখা গেছে, অবসাদগ্রস্ত কর্মীর কারণে কোম্পানির প্রতি বছরে ৪ হাজার থেকে ২১ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মীর সংখ্যা যদি ১ হাজার হয়, তবে বার্ষিক লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন ডলার। অতিরিক্ত চাপে থাকা কর্মীরা ভুল করার ঝুঁকিতে ১১ গুণ বেশি, অসুস্থতাজনিত ছুটির হার ৮ গুণ বেশি এবং অফিসে থেকেও অকার্যকর হওয়ার হার ৪ গুণ বেশি।

করণীয়: সুস্থ কর্মী মানেই সফল প্রতিষ্ঠান

প্রতিষ্ঠান চাইলে সহজ কিছু পদক্ষেপে কর্মপরিবেশ উন্নত করতে পারে। যেমন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ, সুষমভাবে কাজ বণ্টন, অতিরিক্ত ওভারটাইম এড়িয়ে চলা, কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া এবং সৃজনশীলতাকে মূল্যায়ন করা।

শেষকথা

অতিরিক্ত চাপ কোনো প্রতিষ্ঠানকে টেকসই সাফল্য এনে দেয় না, বরং ক্ষতি বাড়ায়। কর্মীদের স্বাস্থ্যবান, সুখী ও উৎসাহী রাখা; এটাই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। চাপ নয়, সহানুভূতি ও সহায়তাই শেষ পর্যন্ত অফিসকে লাভবান করে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×