যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন রুখতে রাশিয়া-চীন-ইরানের দ্বারস্থ মাদুরো
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:২০ এম, ০১ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দেশের দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে রাশিয়া, চীন ও ইরানের সহযোগিতা চান। ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়াকে কেন্দ্র করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নথিতে। বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদুরো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাডার ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান মেরামত এবং সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে সহায়তা চেয়েছেন। মাদুরোর এক সিনিয়র সহকারী মস্কো সফরের সময় চিঠিটি পুতিনের হাতে তুলে দেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকেও মাদুরো একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনার প্রেক্ষিতে “বিস্তৃত সামরিক সহযোগিতা” চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি চীনা কোম্পানিগুলোর তৈরি রাডার শনাক্তকরণ ব্যবস্থার দ্রুত উৎপাদন শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নথিতে আরও বলা হয়েছে, মাদুরো তার চিঠিতে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের “আগ্রাসন” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে কেবল ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নয়, বরং “চীনের মতো মতাদর্শ রয়েছে এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ” হিসেবে দেখিয়েছেন।
সেই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার পরিবহনমন্ত্রী রামন সেলেস্তিনো ভেলাসকেজ সম্প্রতি ইরান থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও ড্রোনের একটি চালান নিয়ে এসেছেন এবং শিগগিরই দেশটিতে সফর করবেন। তিনি এক ইরানি কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা “প্যাসিভ ডিটেকশন ইকুইপমেন্ট”, “জিপিএস স্ক্র্যাম্বলার” এবং “কমপক্ষে এক হাজার কিলোমিটার পরিসরের ড্রোন” চায়।
মাদুরো ২০১৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে দেখছেন। ওয়াশিংটনের দাবি অনুযায়ী, তারা মাদকপাচার প্রতিরোধ অভিযানের অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে যাত্রা করা অন্তত এক ডজন নৌযানে হামলা চালিয়েছে, যেখানে ৬১ জন নিহত হয়েছে। তবে ভেনেজুয়েলা এবং মাদুরো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এর আগে অক্টোবরের শুরুতে ভেনেজুেলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক ফোনালাপে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম নিয়ে “গুরুতর উদ্বেগ” প্রকাশ করেন। এরপর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্বকে “সম্মান করে” এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে সমাধান হওয়া উচিত।
বছরের মধ্যামাঝি সময়ে পরিবহনমন্ত্রী ভেলাসকেজ রাশিয়া সফর করেন এবং সেখানে রুশ পরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মাদুরোর চিঠি পুতিনের হাতে দেন। চিঠিতে ভেনেজুয়েলার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে রাশিয়ার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুখোই এসইউ-২০এমকে২ যুদ্ধবিমানের পুনর্গঠন, আটটি ইঞ্জিন ও পাঁচটি রাডার মেরামত, ১৪ সেট রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ এবং “লজিস্টিক সহায়তা” প্রদানের বিষয়।
মার্কিন নথি অনুসারে, মাদুরো উল্লেখ করেছেন, রুশ সুখোই যুদ্ধবিমানগুলো ভেনেজুয়েলার “সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধক শক্তি”। তিনি রোস্তেকের মাধ্যমে তিন বছরের মধ্যম মেয়াদি অর্থায়ন পরিকল্পনার প্রস্তাবও দিয়েছেন, যদিও নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেনেজুয়েলার অস্ত্রভাণ্ডারের বড় অংশই পুরোনো ও অচল। এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে রাশিয়ার তৈরি সুখোই বিমানের মধ্যে পাঁচটিরও কম সচল ছিল। তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের সময় কেনা রুশ হেলিকপ্টার ও ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই বর্তমানে অকার্যকর।
তবু চলতি মাসে মাদুরো দাবি করেছেন, দেশে রাশিয়ার তৈরি ৫ হাজার ইগলা-এস পোর্টেবল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে।