যুক্তরাজ্য থেকে ২০টি ইউরোফাইটার যুদ্ধবিমান কিনছে তুরস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:২৮ এম, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে পৌঁছেছে তুরস্ক। এই চুক্তির আওতায় দেশটি ২০টি ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান কিনবে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) আঙ্কারায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুই নেতা করমর্দনের মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন করেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একে “এক প্রজন্মের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান বিক্রয় চুক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, “এটি দুই ঘনিষ্ঠ মিত্রের কৌশলগত সম্পর্কের নতুন প্রতীক।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, এই চুক্তি শুধু লন্ডন ও আঙ্কারার সম্পর্ককেই নয়, ন্যাটোর প্রতিরক্ষা কাঠামোকেও আরও শক্তিশালী করবে। তার ভাষায়, “এটি ন্যাটোর দক্ষিণ-পূর্ব ফ্ল্যাঙ্কে অবস্থান করছে, আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই সক্ষমতা সংযুক্ত হওয়া ন্যাটোর জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
স্টারমার জানান, ২০৩০ সালের মধ্যেই প্রথম ইউরোফাইটার বিমানগুলো তুরস্কে পৌঁছাবে। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে দুই দেশ ৪০টি ইউরোফাইটার কেনার বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছিল, যা পরবর্তীতে জার্মানি, ইতালি ও স্পেনসহ ইউরোফাইটার কনসোর্টিয়ামের অন্যান্য সদস্যদের অনুমোদন পায়।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, দেশটি নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের কেএএএন (KAAN) যুদ্ধবিমান চালুর আগে অন্তত ১২০টি যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে, যাতে বিমানবাহিনীর সক্ষমতা অটুট থাকে। এজন্য কাতার ও ওমান থেকেও ১২টি করে টাইফুন ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
এর আগে গত বছর তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৪০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছিল, যদিও সেটির বাস্তবায়ন এখনো ঝুলে আছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়াশিংটন-নেতৃত্বাধীন এফ-৩৫ প্রকল্পে পুনরায় যোগদানের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছেন। ২০১৯ সালে রুশ এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার পর তুরস্ককে ওই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটি স্টারমারের তুরস্ক সফরের প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। তবে সফরের দিনই আঙ্কারার রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা দেখা দেয়, যখন ইস্তাম্বুলের কারাবন্দি মেয়র একরেম ইমামওগলুর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ আনা হয়। তুর্কি প্রসিকিউটররা তাকে “রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তির” সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। ইমামওগলু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব মামলা তার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্য ও তুরস্কের এই নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায়ই নয়, বরং এটি ন্যাটোর ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।