ভারতে মসজিদ প্রাঙ্গণে ইমামের স্ত্রী ও ২ শিশুকন্যাকে নৃশংসভাবে খুন
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:১২ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাগপতের গাঙ্গনাউলি গ্রামে একটি বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ হয়ে গেছে স্থানীয়রা। মসজিদের ভেতরের বাসভবনে এক ইমামের স্ত্রী ও তার দুই ছোট মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার সকালে শিশুরা মসজিদে প্রবেশ করার পর লাশগুলো দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
নিহতরা হলেন গাঙ্গনাউলি জামে মসজিদের প্রধান ইমাম ইব্রাহিমের স্ত্রী ইশরানা (৩০) এবং তাঁদের দুই শিশু কন্যা, সোফিয়া (৫) ও সুমাইয়া (২)। পুলিশ জানায়, তারা রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল।
ঘটনার সময় ইমাম ইব্রাহিম দেওবন্দে কাজে গিয়েছিলেন। তার অনুপস্থিতিতেই এই নৃশংস হামলা চালানো হয় বলে ধারণা করছে পুলিশ।
খবর পাওয়ার পরপরই বাগপতের পুলিশ সুপার সুরজ কুমার রাই, অতিরিক্ত এসপি প্রবীণ কুমার চৌহান ও সার্কেল অফিসার বিজয় কুমার ঘটনাস্থলে পৌঁছান। লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তবে লাশ তোলার সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা দ্রুত বিচারের দাবি জানালে কর্মকর্তারা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন, যার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
পুলিশ জানায়, এই হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বয়স যথাক্রমে ১৩ ও ১৬ বছর। তারা মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা নিত এবং ইমামের ছাত্র ছিল।
পুলিশ সুপার সুরজ কুমার রাই বলেন, “অভিযুক্তরা মসজিদে ধর্মীয় প্রশিক্ষণ নিত এবং ইমাম ইব্রাহিমের হাতে তারা বকাঝকা ও শাস্তি পেয়েছিল বলে জানা গেছে। রাগের বশে তারা বেশ কয়েক দিন ধরে হামলার পরিকল্পনা করে এবং ইব্রাহিম বাইরে থাকাকালীন তা কার্যকর করে।”
তদন্তকারীরা জানান, হত্যায় মসজিদের ভেতরে থাকা একটি ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
মিরাট রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল কালানিধি নাইথানি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় বলেন, “আমরা পারিবারিক বিবাদ, ডাকাতি বা ব্যক্তিগত শত্রুতা; সবরকম সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখছি। পাঁচটি দল গঠন করা হয়েছে এবং অপরাধীদের শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।”
ইব্রাহিম মুজাফ্ফরনগরের সুন্না গ্রামের বাসিন্দা। গত চার বছর ধরে তিনি গাঙ্গনাউলি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর স্ত্রী ইশরানা মসজিদের আঙ্গিনাতেই শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন এবং স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ছিলেন।
হত্যার পর পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এক গ্রামবাসী জানান, “তাঁরা দয়ালু মানুষ ছিলেন এবং কারও সঙ্গে কখনও ঝগড়া করতেন না। কে এমন কাজ করতে পারে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।”
তদন্ত চলাকালীন গ্রামে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে, এবং প্রশাসন জানিয়েছে, হত্যার পেছনে থাকা কারণ ও পরিকল্পনার গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান চালানো হবে।
সূত্র: অবজারভার পোস্ট