দুই বছরের কন্যাশিশুকে ‘জীবন্ত দেবী’ হিসেবে বেছে নিল নেপালের হিন্দু ও বৌদ্ধরা


দুই বছরের কন্যাশিশুকে ‘জীবন্ত দেবী’ হিসেবে বেছে নিল নেপালের হিন্দু ও বৌদ্ধরা

রাজধানী কাঠমান্ডুর একটি সরু গলি দিয়ে বাবার কোলে চড়ে মন্দিরে যাচ্ছে আরিয়াতারা শাক্য। দুই বছর আট মাস বয়সী আরিয়াতারাকে নেপালের নতুন জীবন্ত দেবী বা কুমারী দেবী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্য অনুসারে, নতুন কুমারী দেবী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকবেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপালে এখন হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব চলছে। এই উৎসবেই নির্বাচন করা হয়েছে নেপালের নতুন জীবন্ত দেবী কে। কাঠমান্ডু উপত্যকার আদিবাসী নেওয়ার সম্প্রদায়ের শাক্য গোষ্ঠী থেকে কুমারীদের নির্বাচন করা হয়। প্রধানত হিন্দুপ্রধান দেশ হলেও এই দেবীকে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীরাই পূজা করেন।

সাধারণত দুই থেকে চার বছর বয়সী মেয়েদের জীবন্ত দেবী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। শর্ত হিসেবে তাদের অবশ্যই নিখুঁত ত্বক, চুল, চোখ ও দাঁত থাকতে হবে। পাশাপাশি অন্ধকারে ভয় না পাওয়ার মতো গুণাবলিও থাকতে হয়।

কুমারী দেবীকে সব সময় লাল পোশাক পরিধান করতে হয়, মাথার চুল চূড়ার মতো করে বেঁধে রাখা হয় এবং কপালে একটি তৃতীয় চোখ আঁকা হয়।

কুমারী দেবী কঠোরভাবে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করে। বছরে মাত্র কয়েকবার উৎসবের জন্য তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে গত কয়েক বছরে ঐতিহ্যের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন কুমারী দেবী মন্দির প্রাসাদের ভেতরে ব্যক্তিগত শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করতে পারে এবং তার টেলিভিশন দেখার অনুমতিও আছে।

তবে সাবেক কুমারীদের জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। লোককথা অনুযায়ী, কোনো পুরুষ যদি একজন সাবেক কুমারীকে বিয়ে করেন, তবে তিনি অল্প বয়সে মারা যাবেন। এই কারণে অনেক মেয়ে অবিবাহিত থেকে যান। বর্তমানে নেপাল সরকার অবসরপ্রাপ্ত কুমারী দেবীদের মাসিক ১১০ ডলারের একটি ছোট অঙ্কের পেনশনও দিচ্ছে।

আরিয়াতারা শাক্যকে যখন পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও ভক্তরা কাঠমান্ডুর রাস্তায় শোভাযাত্রা করে তার নতুন আবাস্থলে নিয়ে যায়, তখন বহু ভক্ত হিন্দুদের সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীক হিসেবে দেবীর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ফুল ও অর্থ দান করেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার নেপালের রাষ্ট্রপতিসহ অন্য ভক্তদের আশীর্বাদ করবে নতুন কুমারী দেবী।

নতুন কুমারী দেবীর বাবা অনন্ত শাক্য বলেন, গতকালও সে কেবল আমার মেয়ে ছিল, কিন্তু আজ সে একজন দেবী। তিনি জানান, জন্মের আগে থেকেই আরিয়াতারার মধ্যে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী গর্ভাবস্থায় স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে একজন দেবী এবং তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন, সে খুব বিশেষ কেউ হতে চলেছে।

এর আগে ২০১৭ সালে জীবন্ত দেবী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল তৃষ্ণা শাক্য, যার বর্তমান বয়স ১১ বছর। নতুন দেবী নির্বাচনের পর তৃষ্ণা পরিবার ও ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে প্রাসাদের পেছনের দরজা দিয়ে প্রস্থান করে।

নেপালে এই কুমারী দেবী বা জীবন্ত দেবীর পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মর্যাদা। শাক্য গোষ্ঠীর পরিবারগুলো এই মর্যাদাপূর্ণ আসনে তাদের কন্যাকে নির্বাচন করার জন্য প্রতিযোগিতা করে থাকে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×