ভারতে ভোটার তালিকায় গরমিল, এক ঘরে ৪ হাজার ২৭১ ভোটার
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:২৯ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। উত্তরপ্রদেশের মহোবা জেলায় মাত্র একটি ছোট ভাঙাচোরা ঘরে ৪ হাজার ২৭১ ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় ভারতের নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খবর দিয়েছে মুসলিম মিরর।
জানা যায়, জৈতপুর গ্রামপঞ্চায়েতের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মাত্র ১৬ বাই ১৫ ফুটের এক কামরার ঘরটিকে ভোটার তালিকায় ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, আসন্ন ২০২৬ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চালানো এ সংশোধনে দেখা গেছে— জৈতপুরের মোট ১৬ হাজার ৬৯ জন ভোটারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ নাকি ওই এক ঘরে বসবাস করছেন।
ঘরের মালিক ও প্রতিবেশীরা এই ঘটনা শুনে হতবাক। বাড়ির মালিক বলেন, “বুথ অফিসার যখন বললেন আমার ঘরে নাকি চার হাজারের বেশি ভোটার আছে, ভেবেছিলাম মজা করছেন।” তবে কর্মকর্তারা এটিকে ‘ক্লারিক্যাল ভুল’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের দাবি, ভুলবশত তিনটি ওয়ার্ডের নাম বাড়ি নম্বর ৮০৩-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
সহকারী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আর.পি. বিশ্বকর্মা জানান, “গ্রামে ঘরের নম্বর নিয়মমাফিক ব্যবহার হয় না। ফলে তথ্য প্রবেশের সময় বহু নাম এক ঠিকানায় যুক্ত হয়ে গেছে। ভোটাররা আসল, শুধু ঠিকানায় গরমিল হয়েছে।” অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কুনওয়ার পঙ্কজ সিংও স্বীকার করেছেন যে, ২০২১ সালেও একই ধরনের সমস্যা ধরা পড়েছিল।
শুধু জৈতপুরেই নয়, পানওয়ারি শহরের এক বাড়িতে ২৪৩ জন এবং পাশের আরেক বাড়িতে ১৮৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্মী চৌধুরী রবীন্দ্র কুমার প্রথম অনিয়মটি প্রকাশ্যে আনেন। তিনি বলেন, “এটা ছোট কোনো ভুল নয়। যখন একটি দলিত বাড়িতে শত শত ভোটারের নাম ঠাসা থাকে, তখন সেটা অবহেলা নয়— মানুষের আস্থার সঙ্গে প্রতারণা।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত যাচাই অভিযানে মহোবায় এক লাখেরও বেশি সন্দেহজনক বা পুনরাবৃত্ত ভোটার শনাক্ত হয়েছিল। এ জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন ২৭২টি গ্রামপঞ্চায়েতে ৪৮৬ জন বুথ কর্মকর্তা ও ৪৯ জন সুপারভাইজার নিয়োগ করেছে।
তবুও স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন বাড়ছে। পানওয়ারির এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যদি কর্মকর্তারা হাজার হাজার ভোটারকে এক ঘরে গুঁজে দিতে পারেন, তাহলে আমাদের ভোট কতটা নিরাপদ?”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিবেক ত্রিপাঠী মন্তব্য করেছেন, “গণতন্ত্র একদিনে ধসে পড়ে না, ধীরে ধীরে দুর্বল হয়। এ ধরনের ভুলকে উপেক্ষা করা মানে অপব্যবহারের সুযোগ রাখা।”
সমাজকর্মী রাম নারায়ণ এই অনিয়মকে “গণতন্ত্রের ভিত খেয়ে ফেলা উইপোকা” আখ্যা দেন।
আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিংও অভিযোগ করে বলেন, “এটা ভোট ডাকাতির জ্বলন্ত উদাহরণ। এক ঘরে ৪ হাজার ২৭১ ভোটার কীভাবে সম্ভব? সিসিটিভি ফুটেজ ‘গোপনীয়তা’র অজুহাতে প্রকাশ না করাও সন্দেহ আরও বাড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভোট প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”